আত্রাইয়ে হাঁস প্রতিপালন করে শহিদুল দৃষ্টি কেড়েছে সকলের

রুহুল আমিন, আত্রাই, (নওগাঁ) সংবাদদাতা : মৎস ভান্ডার ও শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে বিলের খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে এলাকার ছোট-বড় সকলের দৃষ্টি কেড়ে এখন স্বাবলম্বী শহিদুল ইসলাম। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক বর্তমানে হাঁস পালন করতে আগ্রহী হয়েছে। তবে প্রাণীসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা পেলে বেকারত্বের অভিষাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক বেকার যুবকই এ পেশায় আতœনিয়োগ করতে পারে বলে সচেতন মহলের ধারনা।
উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে একটু উত্তর দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিশাল আকারের একটি মাঠ রসুলপুর। উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের এ মাঠে এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক বেকার যুবক তার এ হাঁসের খামার দেখে নিজেরা গড়ে তুলেছে হাঁসের খামার। এদের মধ্যে শহিদুল ইসলামের হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার হাঁসের খামারে হাঁসের সংখ্যা ৫/৬ শত।
সরেজমিনে খামার পরিদর্শন শেষে শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অভাবের সংসারে আমি অর্থের অভাবে ভালো কিছু করতে পারিনি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে উঠে না। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেন হাঁসের খামার গড়ে তুলবেন। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না তার। উপজেলার মাধাইমুড়ি এলাকায় খোলা জলাশয়ে বিলের মাঝে হাঁস পালন করা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আহসানগঞ্জ হাট থেকে মাত্র ৫০টি হাঁস কিনে শুরু করেন হাঁস পালনের যুদ্ধ। কঠোর পরিশ্রম করে ৩ বছরের মধ্যে হাঁস পালন করে ব্যাপক লাভবান হন তিনি। এরপর থেকে তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এতে থেমে থাকেনি শহিদুল, নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন হাঁসের হ্যাঁচারী। নিজের হ্যাঁচারীতে তিনি এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন। তিনি আরও জানান বিলে বা নদীর তীরে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন খরচের প্রয়োজন হয় না। অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুন। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমান খরচ হয়, খোলা বিলে সে খরচ অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিলের খোলা জায়গায় খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি। এছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোন ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের উপর পলিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস ২৫০ থেকে ২৮০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। নিজের হ্যাঁচরীতে বাঁচ্চা উৎপাদনের কারণে শহিদুল হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। বর্ষা মৌসুমে তার ৬ মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাঁকি সময় থাকে সে হ্যাঁচারী নিয়ে। আহসাগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের হাঁস পালনকারি মো: ফারুক আহম্মেদ জানান, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বণির্ভর হওয়া যায়। তার মতে লেখাপড়ার পাশাপাশি হাঁস পালন করাটা কোন কষ্টের নয়। তাই এখন তাদের সবার মুখে মুখে একটি-ই শ্লোগান, “করবো মোরা হাঁসের চাষ-থাকবো সুখে বারো মাস। একই গ্রামের শাহাদ আলী ও মজিদ খামারু জানান, আমরা বর্তমানে হাঁস পালন করে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছি এবং হাঁস পালন অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনেকরছেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেকার যুবক-যুবতীরা হাঁসের খামার করে স্ববলম্বী হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করা সম্ভব।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ