আত্রাইয়ে নদী খননের মধ্যদিয়ে আত্রাই নদী আবারো ফিরে পেতে যাচ্ছে তার হারানো যৌবন

রুহুল আমিন,( নওগাঁ) সংবাদদাতা: নওগাঁর আত্রাই নদী খননের মধ্যদিয়ে আত্রাই নদী আবারও ফিরে পেতে যাচ্ছে তার হারানো যৌবন আর এলাকাবসীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হতে চলেছে। আত্রাই নদী একটি ঐতিহ্যবাহি নদী হওয়ার পরও যুগ যুগ থেকে এ নদী খনন না করায় মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমের আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ফলে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এক সময় আত্রাই নদী ছিল খর¯্রােতা। নদীতে উত্তাল ঢেউ আর পালতোলা নৌকা বয়ে চলতো। একমাত্র নৌ পথই ছিল মালামাল পরিবহনের ও ব্যবসা বাণিজ্যের পথ। নদীপথে মালামাল পরিবহন করে আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হতো এলাকার শত শত ব্যবসায়ীরা। সারা বছর নদীতে থাকতো পানি। আর এই পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে চাষ করা হতো বোরো ধানসহ সব রকমের ফসল। এ ছাড়াও সারা বছর মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো বিপুল সংখ্যক মৎস্যজীবী।

কালের আবর্তে নদীটি হারিয়ে ফেলে তার নাব্যতা আর যৌবন। সারা বছর তো দুরের কথা বছরে ৬ মাসও নদীতে ঠিকমত পানি পাওয়া যায় না। ফলে স্বল্প খরচে নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা আর চাষাবাদ করতে পারে না। পারে না মৎস্য জীবীরাও মাছ শিকার করতে। একদিকে আর্থিক লোকসানের শিকার হয় এলাকার হাজার হাজার কৃষক। অপরদিকে বছরের প্রায় ৬ মাস মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় মৎস্যজীবীদের। ফলে থেমে যায় এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চাকা। এ উন্নয়ন তরান্বিত করতে এবং নদীকে আবারও তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন নদী খননের উদ্যোগ গ্রহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের প্রচেষ্টায় আত্রাই নদীর ৪৬ কিলোমিটার জুড়ে ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। সে অনুযাায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) শুরু করে আত্রাই নদী খননের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে চলছে ঐতিহ্যবাহি আত্রাই নদী খনন। এ নদী খনন শেষ হলে সারা বছর নদীতে থাকবে পানি। এ পানি দিয়ে কৃষকরা স্বল্প খরচে তাদের কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। এ ছাড়াও মৎস্যজীবীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

এ ব্যাপারে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী শ্রী দিনেশ কুমার পাল বলেন, আত্রাই নদী আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহি নদী। এ নদী খননের ফলে শুধু কৃষি ক্ষেত্রেই নয় মৎস ক্ষেত্রেও অতুলনীয় ভ’মিকা রাখবে। জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনদেরও অনেক উপকার হবে। নদী খননের ফলে নদীর গভীরতা বাড়বে এবং কৃষিজমি ও বন্যার পানিতে লোকালয় ডুবে যাওয়ার শঙ্কা কমে আসবে। পাশাপাশি নৌপথে পণ্য পরিবহন, মাছ চাষ ও সেচ সুবিধা বাড়বে।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মো: ওয়াজেদ আলী লিটন বলেন, আগে আমরা নদীর পানি দিয়ে বোরো ধানসহ সব রকমের কৃষিপণ্য চাষ করতাম। এতে খরচ খুবই কম হতো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে বোরোচাষ মৌসুমের আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কয়েকগুণ বেশি খরচে মাঠে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বোরোসহ বিভিন্ন প্রকারের ফসলের চাষ করতে হচ্ছে। এতে আমরা অনেক লোকসানের শিকার হচ্ছি। নদী খনন আমাদের জন্য একটি আশির্বাদ বলে আমরা মনে করছি।

বিস্ময়কর হলেও সত্য আত্রাইয়ে একটি বাড়িতেই অর্ধশত মৌচাক ॥ দর্শনার্থীদের ভিড়

রুহুল আমিন, (নওগাঁ) সংবাদদাতা : বিস্ময়কর হলেও সত্য নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ছোট্ট একটি ফ্লাট বাড়ির চারপাশ জুড়ে রয়েছে মৌমাছির অর্ধশত মৌচাক। এ বাড়িটিকে ঘিরে প্রতি মুহুর্ত হাজার হাজার মাছির আনাগোনা। মৌমাছিগুলো আবার আপন মনে মধু সংগ্রহ করে ফিরছে চাকে। বাড়ির মালিক বা প্রতিবেশিদের কাউকেই ক্ষতি করে না। গোটা বাড়ি জুড়েই মৌমাছির সমারোহ। এ যেন মৌমাছিদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাড়িটি এলাকার মানুষের কাছে মৌমাছির বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের আহমাদ আলীর বাড়ির ছাদ ও দেয়ালে প্রায় অর্ধ শতাধিক মৌমাছির চাক বসেছে। এসব মৌমাছি চাষ করা নয়, প্রাকৃতিকভাবেই চাক বসিয়ে বাড়িটিতে বাসা করে নিয়েছে মৌমাছিরা। এসব চাক থেকে বাড়ির মালিক দীর্ঘদিন ধরে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। একতলা বিশিষ্ট বাড়ির নিচের ছাদের কার্ণিশ জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে মৌচাকগুলো সাজানো। প্রথমে দেখলে মনে হবে কোন নিপুন হাতের কারুকার্য্য। প্রতিদিন এই মৌ চাকগুলো দেখার জন্য এলাকার মানুষরা ভিড় করছেন এই বাড়িতে।

এ বিষয়ে বাড়ির মালিক মো: আহমাদ আলী জানান, প্রায় তিন চার বছর ধরে তার বাড়িতে এরকম মৌমাছির চাক রয়েছে। তবে সরিষা মৌসুমে চাকের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এসব মৌচাক থেকে শুধু সরিষা মৌসুমেই মধু সংগ্রহ করা হয় দুইবার। প্রতিবার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি করে মধু সংগ্রহ করা হয়।। বৈশাখ ও জৌষ্ঠের খরতাপে ফুল ও পানি সল্পতার কারণে ৮ থেকে ১০টি মৌচাক থাকে। আষাড় ও শ্রাবন মাস আসলে আবারো ২০ এর অধিক মৌচাকের সংখ্যা বেড়ে যায় বলে জানালেন আম্মাদ আলী। তিনি আরো জানান, মধু সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় ভালোভাবে মধু সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। তবে মৌমাছি পরিচর্যা, মধু সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ে জানতে পারলে আরও বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মনেকরেন। বিষয়টি সম্পর্কে এখনও কৃষি বিভাগের কেউ জানে কি না তাও জানা নেই তার।

এ ব্যাপারে আহমাদ আলীর স্ত্রী ছেলিনা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি মধু আহরণের জন্য ছুটে যায় আবার মধু নিয়ে চাকে ফিরে আসে। এ সময় সারা বাড়ি মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে। শুধু ঘরের বাহিরে না ঘরের ভিতরেও মৌমাছিরা বাসা বসতে চায়। কিন্তু বাচ্চাদের হুল ফোটাতে পারে এমন আশংকায় আমরা বসতে দিই না। তা নাহলে হয়তো গোটাবাড়িই মৌচাকে ভরে যেতো। তিনি আরো বলেন, মৌমাছির এ মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখতে তাদের বাড়ির প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছে। এতে তারা বেশ আনন্দিতও হন। মধুর চাক কাটতে অনেক মধু ব্যবসায়ীরা আসেন কিন্তু তারা দাম না দিয়ে চাক কেটে মধুর অর্ধেক ভাগ দিয়ে যান।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও মৌমাছিদের জায়গা দিতে পারলে ব্যবসায়ীক ভাবে সফল হবেন আহমাদ আলী এমনটিই মনে করছেন এই কর্মকর্তা।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ