ঝিনাইদহের মহেশপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে জমি রেজিষ্ট্রিতে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’॥ দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা

মহেশপুর(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধি ঃ ঝিনাইদহের মহেশপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখকগণ সমিতির নামে ‘গলাকাটা সিন্ডিকেট’ গঠন করে ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি নবী নেওয়াজ ও প্রশাসনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জমি রেজিষ্ট্রিতে জনগণের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটে নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দূর্ণীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
মহেশপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখকরা ‘মহেশপুর একতা দলিল লেখক সমিতি’র নামে জমি রেজিষ্ট্রিতে “দলিলের মূল্যের উপর আদায়”-এর একটি তালিকা তৈরী করে গত ৪ সেপ্টেম্বর/১৬ থেকে জমি রেজিষ্ট্রিতে জনসাধারণের নিকট থেকে ‘গলাকাটা মূল্য’ আদায় করছে। বিষয়টি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তদন্তের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা সেলামী লেন-দেন ছাড়া আর কিছুই হয়নি। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহের চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্ট্রার ও মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিলে তারাও গলাকাটা সিন্ডিকেটের ‘টাকার’ কাছে হার মেনেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর/১৬ তারিখের আগে ১ লক্ষ টাকার একটি বিক্রয় খোশ কোবলা দলিলে সর্বোচ্চ খরচ হতো ১১ হাজার টাকা, ২ লক্ষ টাকার একটি খোশ কোবলা দলিলে ২২ হাজার টাকা, ৫ লক্ষ টাকার একটি খোশ কোবলা দলিলে ৫০ হাজার টাকা, ১০ লক্ষ টাকার একটি খোশ কোললা দলিলে ১ লক্ষ টাকা।

সমিতির নামে ‘সিন্ডিকেট’ করে চলতি ২০১৮ সালের প্রথম থেকে পৌর এলাকার বাইরে ১ লক্ষ টাকা মূল্যের বিক্রয় খোশ কোবলা দলিলে ১৩ টাকা, ২ লক্ষ টাকা মূল্যের খোশ কোবলা দলিলে ২৬ হাজার টাকা, ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের খোশ কোবলা দলিলে ৬৫ হাজার টাকা, ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের বিক্রয় খোশ কোবলা দলিলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার খোশ কোবলা দলিলে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আদায় করছে। যদিও একটি ৫০ লক্ষ টাকার খোশ কোবলা দলিল রেজিষ্ট্রিতে প্রকৃত খরচ সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে তারা জোর-জবরদস্তি করে অতিরিক্ত আদায় করছে ২ লক্ষ টাকা। এছাড়া তারা পৌর এলাকার জমি রেজিষ্ট্রিতে ১ লক্ষ টাকার খোশ কোবলায় ১৪ হাজার টাকা, ৫ লক্ষ টাকার খাশ কোবলায় ৭০ হাজার টাকা, ১০ লক্ষ টাকার খাশ কোবলায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ৫০ লক্ষ টাকার খাশ কোবলায় ৭ লক্ষ টাকা আদায় করছে।
অন্যদিকে আগে হেবা দলিল রেজিষ্ট্রিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হতো গত ৪ সেপ্টেম্বর/১৬ থেকে তার প্রায় দ্বিগুন টাকা আদায় করছে।
উল্লেখিত দলিল লেখক সমিতির দলিল লেখকরা সমিতির নামে জমি রেজিষ্ট্রিতে নিদিষ্ট পরিমান অর্থ আদায় করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সাংবাদিকদের ঝামেলা এড়াতে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কেটে রেখে সপ্তাহ শেষে ১১০ জন দলিল লেখকের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে।
মহেশপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কতিপয় দলিল লেখক সহজ-সরল জনসাধারণের জমি রেজিষ্ট্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে ইতিমধ্যেই কেউ কেউ শত বিঘা জমির মালিক, কেউ কোটিপতি আবার কেউ ৩/৪ তলা বিল্ডিং-এর মালিক বনে গেছে। তারা জমি রেজিষ্ট্রিতে সমিতির নামে যে পরিমান টাকা আদায় করছে তাতে ১১০জন দলিল লেখকের সবাইকে কোটিপতি হতে বেশী দিন দেরী হবে না।

ভুক্তভোগীরা এই গলাকাটা সমিতির হাত থেকে রেহাই পেতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ