চোখের জল ও ভালবাসা শেষ বিদায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত প্রিয়ক-প্রিয়ংময়ীর দাফন সম্পন্ন

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি : নেপালে ত্রিভুবন বিমান বন্দরে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তে নিহত গাজীপুরের শ্রীপুরের এফএইচ প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ী তামাররা দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ২০মার্চ মঙ্গলবার দু’দফা জানাযার নামাজের পর বাবা ও মেয়েকে বাড়ির আঙিনার ফুল বাগানে বেলা ১২টার দিকে পাশাপাশি কবরে সমাহিত করা হয়েছে।

নিহত প্রিয়কের চাচাতো ভাই লুৎফর রহমান বলেন, সোমবার মরদেহ দুটি বাড়ীতে আনার হয়। সকাল ৯টায় শ্রীপুরের আব্দুল আউয়াল ডিগ্রী কলেজ মাঠ ও বেলা ১১টায় জৈনা বাজার এলাকার মাদবর বাড়ী মাঠে দু’দফা জানাযা শেষে প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ী’র মরদেহ প্রিয়কের নিজ বাড়ির সামনেই দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দাফনের সময় শোকার্ত মানুষের উপস্থিতিতে সৃষ্ট হট্টগোল ঠেকাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে।

এর আগে সর্বস্তরের লোকজনের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহের কফিন দুটি প্রিয়কের বিদ্যাপিঠ আব্দুল আউয়াল ডিগ্রী কলেজের শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণে রাখা হয়। পরে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার, তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আব্দুল বাতেন সরকার, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুসহ সর্বস্তরের জনগণ তাদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ বিমান বিধ্বস্তে নিহত প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ীর জানাযায় অংশ নিতে সকাল থেকে ভিড় করতে থাকে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে আব্দুল আউয়াল ডিগ্রী কলেজের মাঠ। মাঠে কোন প্রান্তেও যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ীকে শেষ বার দেখতে তাঁর বাড়ীতে ভিড় করেছেন তাঁর আত্মীয় স্বজন, বন্ধু ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীরা। বাড়ীতে হাজারো লোকের সমাগম থাকলেও নেই কোন কোলাহল। সবাই যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। বাড়ির পরিবেশ দেখে বুঝা যাচ্ছে, প্রিয়ক-প্রিয়ংময়ী যেন কেড়ে নিয়েছে উপস্থিত হাজারো শোকার্ত মানুষের মুখের কথা।

মা ফিরোজা বেগম তাঁর একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ককে বাড়ি থেকে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলেন, আরেক মা আলমুন নাহার এ্যানীর সামনে বিধ্বস্ত বিমানের ভেতরই সন্তান মারা গিয়েছে। দুই মায়ের সন্তান আজ একসাথেই বাড়ি ফিরে এসেছে, তবে কফিন বন্দি হয়ে। দুই “মা” কফিন দেখে জানলেন সন্তানরা আর তাঁেদর মা বলে ডাকবেন না। মায়ের বুক খালি করে যাওয়া শিশু প্রিয়ংময়ী বাবার সহযাত্রী হয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

স্বামী-সন্তানের কফিন নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করছিলেন প্রিয়ংময়ীর মা আলমুন নাহার এ্যানি। সোমবার রাত ৮টায় ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেয়ে প্রিয়ংময়ী তামাররা মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন বাড়িতে এসে পৌঁছে তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। এ সময় প্রিয়ংময়ীর মা এ্যানী শুধু একটি কথায় বলেন, তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও। আমি আর কিছু-ই চাই না। মা তামাররা তুমি কোথায়? এসব বলেই অচেতন হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ফারুকের স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ