পত্রমিতালী করে জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের মেয়ে সাথী

স্টাফ রিপোর্টার
চিঠি বা পত্র এক সময় প্রিয়জনের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ছিল। কালি, কলম ও মন এই তিনের সমন্বয় ঘটতো হলুদ-নীল খামের ভেতরে কাগজের ভাঁজে। কাগজে লেখা চিঠির পরতে পরতে থাকতো আবেগ আর সাহিত্য। কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তির ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা চিঠি। ডাকপিয়নের অপোয় প্রহর গোণার দিনও যেন আর নেই। তাই রানারের ঝুমঝুম ঘন্টাধ্বনিও এখন আর সেভাবে শোনা যায় না। হাতে লেখা চিঠির সুসময়ে চিঠিতে বন্ধুত্ব বা পত্রমিতালী বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। পত্রমিতালী হয়ে ওঠেছিল অজানা-অচেনা কারো সাথে বন্ধুত্ব করার এক অনন্য মাধ্যম। বাংলাদেশেও তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা মজেছিলেন পত্রমিতালীতে। পত্রিকা/ম্যাগাজিনে ছাপা পত্রমিতার সাথে নিজের আবেগ-অনুভূতিগুলো বিনিময় করার মধ্য দিয়ে এক নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠতো। মনের মাধুরি মিশিয়ে লেখা চিঠিতে থাকতো অনেক আবেগ, যতœ আর ভালোবাসা। পত্রমিতালীর মাধ্যমে অনেকে বন্ধুর পাশাপাশি জীবনসঙ্গীও খুঁজে পেতেন। পত্রমিতালী করে বন্ধুত্ব ও জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া বিষয়ে গত ৯ অক্টোবর বিবিসি বাংলা একটি প্রচার করে। সেখানেই ওঠে আসে পত্রমিতালী করে জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া কিশোরগঞ্জের মেয়ে সাথী’র গল্প। সেই গল্পই কিশোরগঞ্জ নিউজ এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো: পরিবারে ও বন্ধুমহলে তাদেরকে ‘সবুজ-সাথী জুটি’ বলা হয়। বিয়ের আগেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু হয়েছিল, পত্রমিতালীর মাধ্যমে। আজকের দিনে যা প্রায় অচেনা একটা ব্যবস্থা। কিন্তু নব্বই এর দশক পর্যন্ত পুরো বিশ্বের মত বাংলাদেশেও যা ছিল নতুন বন্ধুত্ব করার এক মাধ্যম। ১৯৯৪ সালে কিশোরগঞ্জের মেয়ে উম্মে সালমা সাথী দৈনিক পত্রিকায় পত্রমিতালীর বিজ্ঞাপন দেখে চিঠি লিখেছিলেন খুলনার রফিকুল ইসলাম সবুজের কাছে। “পেপার পড়তাম, সেইখানে পত্রমিতালীর বিজ্ঞাপন থাকত, তো বান্ধবীকে বলেছিলাম এসএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পেলে পত্রমিতালী করবো। সেই মত ভোরের কাগজ পেপারে ঠিকানা দেখে আমি চিঠি লিখেছিলাম। দূর দেখে লিখেছিলাম, আমি ভৈরবের মেয়ে, আর ওর বাড়ি খুলনায়, যেন জীবনেও আসতে না পারে! তাহলে বাড়ির কেউ জানতে পারবে না।” ২৫ দিন পর চিঠির জবাব এসেছিল সাথীর কাছে। এদিকে, মিঃ ইসলাম যখন বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন, তিনি ভেবে রেখেছিলেন প্রথম যার কাছ থেকে চিঠি আসবে, সেই হবে তার পত্রমিতা, ছেলে বা মেয়ে যেই লিখুক। বন্ধু হয়েছিলেন তারা, এরপর ক্রমে বন্ধুত্ব থেকে প্রণয় এবং পরিণয়।
“আমি দুষ্টামীর ছলে বন্ধুদের সাথে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। চিঠি পেয়ে জবাব দেই। এরপর শুরু। এর আড়াই বছর পর আমি ভৈরব গিয়ে দেখা করি। তারো এক বছর পরে আমরা পরস্পরকে ভালোবাসার কথা বলি।” প্রতিক্রিয়া কেমন হয়েছিল? সাথী জানাচ্ছেন, “এত বছর ধরে চেনাজানা একজনকে মানা কীভাবে করবো? কষ্ট পাবে না? সেজন্য ‘হ্যা’ করে দিয়েছিলাম।” “ভাবি নাই বিয়ে হবে এতদূরে! কিন্তু এর দেড় বছর পরে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বিশ বছর চলছে আমাদের।” হাসতে হাসতে জানান সাথী। ‘সবুজ-সাথী জুটি’ জানিয়েছেন, একেকটি চিঠি আসার মাঝখানে যে সময়ের দূরত্ব থাকে, তার উত্তেজনা ছিল অপরিসীম, তার সঙ্গে এখনকার সামাজিক মাধ্যমে হওয়া বন্ধুত্বের কোন তুলনাই হয় না।

editor

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries