হোসেনপুরে আলুর বাম্পার ফলন ঃ ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্খিত কৃষক
তারেক নেওয়াজ,হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)ঃ
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে চলতি মওসুমে আলুর বাম্পার ফলন হলেও কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্খায় রয়েছেন। অনেক কৃষকের আবাদ খরচ বেশি হওয়ায় তাদের বিঘা প্রতি কিছুটা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই ভুক্তভোগীরা লোকসান পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে গতকাল রোববার (২০ জানুয়ারি) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়, গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্রই আলু তুলার হিড়িক পড়লেও গত কয়েকদিনে ক্রেতার অভাবে কৃষকরা কিছুটা দুচিন্তায় রয়েছেন। অনেক কৃষক জমি থেকে আলু তুলে স্তুপ করে ফড়িয়াদের (মধ্যস্বত্বভোগী)জন্য রেখে দিলেও আশানুরোপ দামে ক্রেতা মিলছেনা তাদের। আলু উত্তোলনের এ ভরা মওসুমে আলু বিক্রেতা বেশি হওয়ায় ফড়িয়ারা বাকিতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে আলু ক্রয় করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু কৃষকেরা লোকসানের আশঙ্খায় জমি থেকে আলু তুলতে অনিহা প্রকাশ করছেন। উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের কৃষক মোঃ বাদল মিয়া,হাজিপুর গ্রামের কৃষক মোঃ করিম মিয়া, মোঃ জয়নাল মিয়াসহ অনেকেই জানান, এ বছর আলুর ফলন ভাল হলেও শ্রমিকের মুজরি বেশি হওয়ায় এবং পাইকারি ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা লোকসানে মুখে পড়েছেন। চর-জামাইল গ্রামে কৃষক সিদ্দিক হোসেনসহ অনেকেই জানান, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে বীজ ক্রয়,জমি প্রস্তুত,সার-কীটনাশক ও শ্রমিক মুজুরিসহ মোট উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। কিন্তু গ্রেনুলা,ডায়মন্ড ও অন্যান্য জাতের আলুর বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে এবছর গড়ে ৬৫-৭০ মন। কিন্তু প্রতি মন আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকা। এতে কৃষকের বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসানের কারন জানতে চাইলে উপজেলার হাজীপুর গ্রামের কৃষক আলাল মিয়া, ফরিদ মিয়াসহ অনেকেই জানান,গত ডিসেম্বর মাস জুড়েই ছিল নির্বাচনি উত্তাপ। ফলে অনেক কৃষকের আলু তুলার সময় হলেও তারা সময়মত ক্ষেত থেকে আলু তুলতে পারেনি। এতে কিছুটা ফলন বিপর্ষের কারনে লোকসান পড়েছেন। তবে জানুয়ারির শুরুতে কৃষকরা পুরোদমে ক্ষেত থেকে আলু তুলে বাজারজাত শুরু করেছে।এতে উপজেলার প্রতিটি হাটে আলুর আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেলেও চাহিদা মাফিক ক্রেতা বা পাইকার না থাকায় মূলতঃ আলুর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা। অন্যদিকে,আলু ব্যবসায়ি গোলাপ মিয়া, রাসেল মিয়াসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানাযায়,হোসেনপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ৮-১০ হাজার টাকা কিন্তু এখন তা বেড়ে গিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকা হয়েছে।একই ভাবে চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বারের তুলনায় এ বছর হোসেনপুরের বিভিন্ন মোকাম থেকে আলু নিতে পাইকাররা আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই আলুর দাম ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইমরুল কায়েছ জানান,এ বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আলু চাষের লক্ষমাত্রা ৩৫০ হেক্টর নির্ধারণ থাকলেও আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। তবে সংরক্ষণ সংকটে কৃষকরা একযোগে আলু বিক্রি করায় তারা ন্যায্য মূল্য থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই তিনি এ উপজেলায় একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।