হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত
মুহাম্মাদ
Al-Masjid AL-Nabawi Door.jpg

আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লিখিত
মুহাম্মাদের নাম
জন্ম
মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ

২৯ আগস্ট ৫৭০ [২]

মৃত্যু৮ জুন ৬৩২ (বয়স ৬২)

মৃত্যুর কারণঅসুস্থতা (প্রবল জ্বর)
সমাধিমসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজের নিচের সমাধিক্ষেত্র, স্থান :মদিনাসৌদি আরব
স্থানাঙ্ক২৪°২৮′০৩.২২″ উত্তর ০৩৯°৩৬′৪১.১৮″ পূর্ব | OSM মানচিত্র
অন্যান্য নামআহমাদআবুল কাসিমরাসূলনবী
পরিচিতির কারণইসলামিক নবী
দাম্পত্য সঙ্গীখাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (৫৯৫-৬১৯)
সাওদা বিনতে জামআ (৬১৯-৬৩২)
আয়িশা (৬১৯-৬৩২)
হাফসা বিনতে উমর (৬২৪-৬৩২)
জয়নব বিনতে খুযায়মা (৬২৫-৬২৭)
উম্মে সালামা হিন্দ বিনতু আবি উমাইয়া (৬২৯-৬৩২)
জয়নব বিনতে জাহশ (৬২৭-৬৩২)
জুওয়াইরিয়া বিনতে আল-হারিস (৬২৮-৬৩২)
রামালাহ বিনতে আবি সুফিয়ান (৬২৮-৬৩২)
রায়হানা বিনতে জায়েদ (৬২৯-৬৩১)
সাফিয়া বিনতে হুওয়াই (৬২৯-৬৩২)
মায়মুনা বিনতে আল-হারিস (৬৩০-৬৩২)
মারিয়া আল-কিবতিয়া (৬৩০-৬৩২)
সন্তানপুত্রগণ : কাসিমআবদুল্লাহইবরাহিম
কন্যাগণ : জয়নবরুকাইয়াহউম্মে কুলসুমফাতিমা
পিতা-মাতাপিতা : আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব
মাতা : আমিনা
আত্মীয়আলীউমরআবু বকরআবু সুফিয়ান
স্বাক্ষর
Muhammad's Letter to Mukaukis.png [৩]
মুহাম্মাদ
বিষয়ের ধারাবাহিকের একটি অংশ
মুহাম্মাদ

মুহাম্মাদ[n ১][৪] (২৯ আগস্ট ৫৭০[২] – ৮ জুন ৬৩২;[৫] আরবি উচ্চারণ শুনতে ক্লিক করুন محمد  মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ নামেও পরিচিত; তুর্কি : মুহাম্মেদ), পূর্ণ নাম : আবু আল-কাসিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (ابو القاسم محمد ابن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم) হলেন ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী,[৬][n ২] (আরবিالنبي আন-নাবিয়্যু‎‎), তথা “বার্তাবাহক” (আরবি : الرسول আর-রাসুল), যার উপর ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক।[৭] অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে,[৮][৯] মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা।[১০][১১][১২][১৩][১৪] তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য;[১৫] বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।[১৬][১৭]

আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে (হস্তিবর্ষমক্কা নগরীতে জন্ম নেওয়া মুহাম্মাদ মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পিতা হারা হন শিশু বয়সে মাতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং প্রথমে তার পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও পরে পিতৃব্য আবু তালিবের নিকট লালিত পালিত হন। হেরা পর্বতের গুহায় ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন। জিবরাঈল ফেরেশতা এই পর্বতের গুহায় আল্লাহর তরফ থেকে তার নিকট ওহী নিয়ে আসেন।[১৮] তিন বছর পর ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে[১৯] মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ওহী প্রচার করেন,[২০] এবং ঘোষণা দেন “আল্লাহ্ এক” ও তার নিকট নিজেকে সঁপে দেওয়ার মধ্যেই জাগতিক কল্যাণ নিহিত,[২১] এবং ইসলামের অন্যান্য নবীদের মত তিনিও আল্লাহর প্রেরিত দূত।[২২][২৩]

মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মাদের নিকট আসা ওহীসমূহ কুরআনের আয়াত হিসেবে রয়ে যায় এবং মুসলমানরা এই আয়াতসমূহকে “আল্লাহর বাণী” বলে বিবেচনা করেন। এই কুরআনের উপর ইসলাম ধর্মের মূল নিহিত। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও সিরাত (জীবনী) থেকে প্রাপ্ত মুহাম্মাদের শিক্ষা ও অনুশীলন (সুন্নাহ) ইসলামী আইন (শরিয়াহ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রাক-ইসলামী আরব

৬০০ শতকে ইসলামের উত্থানের পূর্বমুহূর্তে আরব উপদ্বীপ, বাইজান্টাইন ও সাসানীয়-পারস্য সাম্রাজ্য।

আরব উপদ্বীপ ছিল মূলত শুষ্ক ও আগ্নেয়গিরিপূর্ণ, ফলে মরুদ্যান বা নদী তীরবর্তী অঞ্চল ছাড়া কৃষিকাজ খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। আরব বলতে এখানে মক্কা ও মদিনা এবং এদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে উঠা অংশকে বুঝানো হচ্ছে। মদিনা ছিল কৃষিকাজের উপযোগী বৃহৎ নগরী, অন্যদিকে মক্কা ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসতিসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।[২৪] এই দুই অংশের সাথেই মুহাম্মাদের জীবনের সম্পৃক্ততা ছিল।

তৎকালীন আরব অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ব্যবসায় ও পশুপালন। স্থানীয় আরবরা যাযাবর ও গৃহী দুই শ্রেণিরই ছিল। যাযাবররা পানি ও খাদ্যের জন্য তাদের লোকজন নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত। অন্যদিকে গৃহীরা একই স্থানে বসবাস করত এবং বাণিজ্য ও কৃষিকাজে মনোনিবেশ করত। যাযাবররা মরুপথে যাত্রীবাহী গাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের থেকে মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের ভরণপোষণ করত। তারা এই কাজকে অপরাধ বলে মনে করত না।[২৫][২৬]

মুহাম্মাদের জীবনের উপর তথ্যসূত্র

মুহাম্মাদের উপর অনেক জীবনীকার জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন। তার জীবনীগ্রন্থকে সাধারণভাবে “সিরাত” গ্রন্থ বলে। মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর থেকে অনেক মুসলিম ও অমুসলিম তার জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে ইসহাক রচিত মুহাম্মাদের সর্বাধিক প্রাচীনতম নির্ভরযোগ্য জীবনী সংকলন সিরাতে ইবনে ইসহাক (যা অনেকের মতে বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত) এবং তা হতে সম্পাদিত সিরাতে ইবনে হিশাম,[২৭] আল তাবারি রচিত “সিরাতে রাসুলাল্লাহ“,[২৮] ইবনে কাসির রচিত “আল-সিরাত আল-নববিয়াত”, মার্টিন লিংসের “মুহাম্মাদ : হিজ লাইফ বেজড অন দ্য আর্লিয়েস্ট সোর্সেস”, ক্যারেন আর্মস্ট্রং রচিত “মুহাম্মাদ : এ বায়োগ্রাফি অব দ্য প্রফেট” এবং “মুহাম্মাদ : এ প্রফেট অব আওয়ার টাইম”, মার্মাডিউক পিকথাল রচিত “আল আমিন : এ বায়োগ্রাফি অব প্রফেট মুহাম্মাদ”, সাম্প্রতিককালে রচিত আর্-রাহিকুল মাখতুম, বাংলা ভাষায় গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবীএয়াকুব আলী চৌধুরীর নুরনবী, মওলানা আকরম খাঁ রচিত মুস্তাফা চরিত প্রভৃতি।

হাদিস

আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্র হল হাদিস সংকলন, মুহাম্মাদের মৌখিক ও কার্যগত শিক্ষা ও ঐতিহ্য। মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বহু প্রজন্মব্যাপী হাদিস সংকলন করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুহাম্মাদ আল বুখারীমুহাম্মাদ ইবনে ইসা আত-তিরমিজি প্রভৃতি।[২৯]

কিছু পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ ও হাদিস সংকলনকে সম্পূর্ণ নির্ভুল ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র বলে মনে করেন।[২৯] আবার ম্যাডেল্যাঙের মতো পণ্ডিতগণ পরবর্তী যুগে সংগৃহীত হাদিসের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান না করলেও সেগুলো ঐতিহাসিক পরিস্থিতি সাপেক্ষে এবং প্রসঙ্গ ও ব্যক্তির সাথে সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে বিচার করে থাকেন।[৩০]

ইসলামী চরিতাভিধান অনুসারে জীবনী

আরও দেখুন: মুহাম্মদের জীবনের ঘটনাপঞ্জি

জন্ম

মুহাম্মাদ বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন[৩১][৩২]। প্রচলিত ধারণা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মান।[৩৩]। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সাল উল্লেখ করেছেন; তবে প্রকৃত তারিখ উদঘাটন সম্ভবপর হয় নি। তাছাড়া মুহাম্মাদ নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি; এজন্যই এটি নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি মাস নিয়েও ব্যাপক মতবিরোধ পাওয়া যায়। যেমন, একটি বর্ণনায় এটি ৫৭১ সালের ৯ রবিউল আউয়াল এপ্রিল ২৬ হবে; সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে তার জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে[৩৪][৩৫] এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহণের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।

শৈশব ও কৈশোর কাল

মুহাম্মাদএর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব তার জন্মের প্রায় ছয় মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।[৩৬] তৎকালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন।[৩৭] এই রীতি অনুসারে হয়রত মুহাম্মাদকে’ও হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেওয়া হয়।[৩৮] এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য : শিশু মুহাম্মাদ কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মুহাম্মাদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। ইসলামী বিশ্বাস মতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে — একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেন ফেরেশতা জিবরাইল ও ফেরেশতা মিকাইল। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে বক্ষ বিদারণের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন মা আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদিনায় যাবেন। সম্ভবত কোনো আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। মা আমিনা, ছেলে, শ্বশুর এবং সঙ্গী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছেন। তিনি মদিনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন[৩৮][৩৯]। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদা-ই মুহাম্মাদের দেখাশোনা করতে থাকেন[৩৫][৩৮]। মুহাম্মাদএর বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মুহাম্মাদএর দায়িত্ব দিয়ে যান।[৩৫]

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদএর বয়স যখন ১২ বৎসর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেন না। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস নামক এক খ্রিষ্টান পাদ্রি ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গির্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন.[৪০]। ফিজারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ, তিনি সরাসরি যুদ্ধ না করে, নিজ গোত্রের লোকদের অস্ত্রের যোগান দেয়া সহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তার কিছু করার ছিল না। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তার উত্তম চরিত্র ও সদাচরণের কারণে পরিচিত মহলের সবাই তাকে “আল-আমিন” (আরবি : الامين, অর্থ : “বিশ্বস্ত, বিশ্বাসযোগ্য, আস্থাভাজন”) “আল-সিদ্দিক” (অর্থ : “সত্যবাদীl”) বলে সম্বোধন করতেন।[৮][৩২][৪১][৪২]

নবুয়ত-পূর্ব জীবন

ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রাথমিক দশায় আরবের মানচিত্র

আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং মুহাম্মাদ এতে যোগদান করেন ও এই সংঘকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোনো পেশা ছিল না। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা’দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। ব্যবসায় উপলক্ষে তিনি সিরিয়াবসরাবাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন।[৪৩] মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদিজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

খাদিজা মাইসারার মুখে মুহাম্মাদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপারে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে মুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন। মুহাম্মাদ তার চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫।[৪৩] খাদিজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি। খাদিজার গর্ভে মুহাম্মাদের ছয় জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে, যার মধ্যে চার জন মেয়ে এবং দুই জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসিম, জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুমফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে ও একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সসকলেই তার জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।

মুহাম্মাদ এর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা’বা গৃহের পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মাণের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি নামক এক ব্যক্তি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন মুহাম্মাদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।[৪৪][৪৫]

নবুওয়ত প্রাপ্তি

একাদশ শতাব্দীর পারসিয়ান কুরআনের একটি পৃষ্ঠা

ইসলামিক তথ্যসূত্রানুসারে চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মাদনবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই সৃষ্টিকর্তা তার কাছে বাণী প্রেরণ করেন। আজ-জুহরি বর্ণিত হাদিসে অনুসারে মুহাম্মাদসত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহি লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদপ্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন[৪৬] এবং তাকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন :

উত্তরে মুহাম্মাদজানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিবরাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেওয়ার পর মুহাম্মাদ পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। মুসলিমদের ধারণা অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। বর্ণনায় আরও উল্লেখ আছে প্রথম বাণী লাভের পর মুহাম্মাদএতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাকেন, “আমাকে আবৃত কর”। খাদিজা মুহাম্মাদের এর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে যান[৪৮]। নওফল তাকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে।[৪৯][৪৯] ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী। তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর তার কাছে দ্বিতীয় বারের মতো স্রষ্টার বাণী আসে। এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ।

মক্কী জীবন

মক্কায় মুহাম্মদের জীবনের ঘটনাপঞ্জি

হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মাদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান

গোপন প্রচার

প্রত্যাদেশ অবতরণের পর মুহাম্মাদবুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদএর আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তার সহধর্মিণী খাদিজা[৫০] এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদএর চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তার আদর্শ মেনে নেয় নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো আলী[৪৬] ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর[৫০] এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।

প্রকাশ্য দাওয়াত

তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরনের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। মুহাম্মাদ সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, “আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসুল”। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায়।[৫১] বেশিরভাগ মক্কাবাসী তাকে অবজ্ঞা করে, তবে তার অল্প সংখ্যক অনুসারীও হয়। মূলত তিন শ্রেণীর লোকজন তার অনুসারী হয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে: ছোট ভাইগণ ও বৃহৎ সওদাগরদের পুত্ররা; যেসব ব্যক্তি তাদের সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থান থেকে চ্যুত হয়েছেন বা শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারেননি এবং দুর্বল ব্যক্তিরা, বিশেষ করে নিরাপত্তাহীন বিদেশিরা।[৫২]

মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন

মুহাম্মাদের বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে তার উপর নির্যাতন শুরু করে : প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কূটতর্ক এবং বিপরীত যুক্তি।[৫০] এগুলোতেও কাজ না হওয়াতে এক সময় ইসলামের প্রচারকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং তা পরিচালনা করার জন্য একটি অপপ্রচার গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়। একই সাথে তৎকালীন আরব কবি ও চাটুকারদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় মনোরঞ্জক সাহিত্য ও গান-বাজনার দল, এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদের সাথে আপোসেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ তা মেনে নেন নি; কারণ আপোসের শর্ত ছিল প্রচারবিহীনভাবে ইসলাম পালন করা অথবা বহুঈশ্বরবাদী পৌত্তলিকতাকে সমর্থন করে ইসলাম প্রচার করা, অথচ প্রতিমাবিহীন একেশ্বরবাদের দিকে মানুষকে ডাকাই ছিল তার ধর্ম প্রচারের সর্বপ্রথম ঐশী দ্বায়িত্ব।[৫৩]

ইথিওপিয়ায় হিজরত

ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশির কারণে তা সফল হয়নি।[৮][৫৩]

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ

এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল মুহাম্মাদ এর চাচা হামজা এবং কুরাইশ নেতা উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। মুহাম্মাদকে তার চাচা হামজা খুব পছন্দ করতেন এবং তাকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। আবু জাহল কাবা প্রাঙ্গণে মুহাম্মাদের সাথে কঠোর ভাষায় বিরূপ আচরণ করেন। এ ঘটনা জানতে পেরে মুহাম্মাদের চাচা হামজা তার প্রতিবাদস্বরূপ আবু জাহলকে মারধোর করেন এবং মুহাম্মাদের সমর্থনে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়। আবু জাহলের সঙ্গী হিসেবে কুরাইশ বলশালী যুবক উমরও মুসলিমদের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতেন। মুহাম্মাদ সবসময় প্রার্থনা করতেন যেন আবু জাহল ও উমরের মধ্যে যে কোনো একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। উমরের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তার এই প্রার্থনা পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবেচিত হচ্ছিল। তবুও উমরের ইসলাম গ্রহণে মুসলিমদের আধিপত্য আরও মজবুত হয় এবং মুহাম্মাদ সহ মুসলিমগণ উমরের কাছ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা দানের আশ্বাস পেয়ে তখন থেকে উমরের সাথে কাবা প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে উপাসনা করা শুরু করেন।[৫৪]

একঘরে অবস্থা

এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছিল তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ ও তার অনুসারী সহ বনু হাশিম গোত্রকে একঘরে ও অবরোধ করে। তিন বছর অবরুদ্ধ থাকার পর তারা মুক্তি পায়।[৫৫][৫৬]

দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন

মুক্তির পরের বছর ছিল মুহাম্মাদের জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে মুহাম্মাদ মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে তাকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েন নি; বরং সেখানেও তিনি ইসলাম প্রসারের সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।[৫৬]

মি’রাজ বা উর্দ্ধারোহণ

ইসলামী ভাষ্যমতে মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে ইসরা নামে পরিচিত। পবিত্র হাদিস শরীফ ও সাহাবা-আজমাঈ’নদের বর্ণনানুযায়ী, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বুরাক (একটি ঐশ্বরিক বাহন বিশেষ)’এ করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এ সময় তিনি বেহেশ্‌ত ও দোজখ অবলোকন করেন এবং ইব্রাহিমমূসা ও ঈসা নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৫৭] এই যাত্রা মুসলমানদের কাছে মি’রাজ নামে পরিচিত। ইসলামী সূত্রানুসারে এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোনো সময়ই অতিবাহিত হয় নি বলে ধারনা করা হয়। মুহাম্মাদের প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক ঘটনাটি আধ্যাত্মিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন, অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে আল-তাবারি ও ইবনে কাসিরদের মত যুক্তিবাদী ইসলামী ইতিহাসবেত্তাদের মতে মি’রাজে মুহাম্মাদ সশরীরে উর্দ্ধারোহণ করেছিলেন বলে যুক্তি দেখান।[৫৭]

মদিনায় হিজরত

মুহাম্মাদের আহ্বানে মক্কায় বেশকিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মূলত হজ্জ করতে এসে ইসলামে দাওয়াত পেয়েছিল। এরা আকাবা নামক স্থানে মুহাম্মাদের কাছে শপথ করে যে তারা যে কোনো অবস্থায় তাদের নবী মুহাম্মাদকে রক্ষা করবে এবং ইসলামে প্রসারে কাজ করবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামে সুপরিচিত। এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং একসময় মদিনার ১২টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মাদকে মদিনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।[৫৮][৫৯] মদিনা তথা ইয়াসরিবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদিদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকে। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে[৫৮]। এ থেকে মদিনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেওয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারে না। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। এ চিন্তা থেকেই তারা মুহাম্মাদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল[৮], যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যায়। সবশেষে মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন[৬০][৬১]। তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয় নি। এভাবেই মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে। যারা মুহাম্মাদের সাথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিল তারা “মুহাজিরুন” নামে পরিচিত হয়ে উঠল।[৮]

মাদানী জীবন

আড়াল করুনমদীনায় মুহাম্মদের জীবনের ঘটনাপঞ্জি
আনু. ৬২২মদিনায় হিজরত
৬২৩কাফেলা আক্রমণের সূচনা
৬২৩আল কুদর আক্রমণ
৬২৪বদরের যুদ্ধ: মুসলিমগণ মক্কাবাসীদেরকে পরাজিত করেন
৬২৪সাওকিকের যুদ্ধ, আবু সুফিয়ান বন্দী হন
৬২৪বনু কায়নুকা গোত্রকে বহিষ্কার
৬২৪থি আমিরের আক্রমণ, মুহাম্মাদ গাতাফান গোত্রের ওপর আক্রমণ করেন
৬২৪খালেদ বিন সুফিয়ান ও আবু রাফির গুপ্তহত্যা
৬২৫উহুদের যুদ্ধ: মক্কাবাসী মুসলিমদের পরাজিত করে
৬২৫বির মাওনা ও আল রাজির শোকগাঁথা
৬২৫হামরা আল-আসাদের আক্রমণ, শত্রুপক্ষ ভীত হয়ে পশ্চাদপসরণ করে
৬২৫বনু নাদির গোত্র আক্রমণ এবং বহিষ্কার
৬২৫নজদ আক্রমণবদর আক্রমণ এবং দুমাতুল জান্দাল আক্রমণ
৬২৭খন্দকের যুদ্ধ
৬২৭বনু কুরায়জা গোত্র আক্রমণ, সফল অবরোধ
৬২৮হুদায়বিয়ার সন্ধি, কাবায় প্রবেশাধিকার লাভ
৬২৮খায়বার বিজয়
৬২৯প্রথম হজ্জ
৬২৯বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণে ব্যর্থতা: মু’তার যুদ্ধ
৬৩০রক্তপাতবিহীন মক্কা বিজয়
৬৩০হুনাইনের যুদ্ধ
৬৩০তায়িফ অবরোধ
৬৩১আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ স্থানের শাসনক্ষমতা লাভ
৬৩২ঘাসসানীয় সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ: তাবুক যুদ্ধ
৬৩২বিদায় হজ্জ
৬৩২মৃত্যু, ৮ই জুনে মদিনায়

মসজিদ-এ-নববী

নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: হিজরি পরবর্তী।

স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ন

মুহাম্মাদ মদিনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল বনু আওস ও বনু খাজরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছিলেন। মদিনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদিনা সনদ স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদি গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল।[৫৮][৫৯] এই সনদের মাধ্যমে মদিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ হন তার প্রধান।[৬২] যে সকল মদিনাবাসী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম মুহাজিরদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেন তারা আনসার (সাহায্যকারী) নামে পরিচিত হন।[৮]

মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ

মুহাম্মাদএর নাম(محمد) লিখা একটি আরবি লিপি

মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদিনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।[৬৩] মুহাম্মাদ মদিনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মাদ ৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়।[৬৪][৬৫] মুসলিমদের মতে, এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে প্রথম দিকে কুরাইশরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয় এবং মুসলিমগণ সূচনাপর্বে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত মুহূর্তের নীতিগত দুর্বলতার কারণে পরাজিতের বেশে মদীনায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদিনা আক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।[৬৬]

মদিনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক

তুরস্কের এদ্রিনে মহানবীর নামের স্বাক্ষর সংবলিত লিপি

কিন্তু এ সময় মদিনার বসবাসকারী ইহুদিরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকী হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদিরা বিশ্বাস করত না যে, একজন অ-ইহুদি শেষ নবী হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয় নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। মুহাম্মাদ প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদি গোত্রের উপর আক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদিনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদিকে মদিনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।[৬৭] মুহাম্মাদের এই ইহুদি বিদ্বেষের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক[৬৮]। ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদিরা মদিনার জন্য একটি হুমকী ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।[৬৯]

হুদাইবিয়ার সন্ধি

কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ করা আছে,[৭০] তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মাদ এক দিব্যদর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জের জন্য মাথা কামাচ্ছেন।[৭১] এ দেখে তিনি হজ্জ করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরি সনের শাওয়াল মাসে হজ্জের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ করা ছাড়াই মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মাদ এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।[৭২]

বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী মুহাম্মাদ সারা বিশ্বের রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দেওয়া তার দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে তিনি এ কাজে মনোনিবেশ করেন। সে সময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য, এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের ‘আজিজ মুকাউকিস’, ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরির জিলহজ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।[৮][৭৩][৭৪][৭৫]

প্রেরিত দূতগণের তালিকা

রোমসম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে মুহাম্মাদের প্রেরিত চিঠি
মুকাউকিসের কাছে মুহাম্মদের চিঠি
বাহরাইনের শাসক মুনজিরের নিকট প্রেরিত চিঠি
  1. দাহিয়া কালবি কে রোমসম্রাট কায়সারের (হিরাক্লিয়াস বা হিরাকল নামে অধিক পরিচিত) কাছে।
  2. আবদুল্লাহ বিন হুযায়ফা আস-সাহমিকে পারস্যসম্রাট কিসরা বা খসরু পারভেজের (খসরু ২) কাছে।
  3. হাতিব বিন আবু বুলতা’আ কে মিশরের (তৎকালীন আলেকজান্দ্রিয়ার) শাসনকর্তা মুকাউকিসের কাছে।
  4. আমর বিন উমাইয়া কে হাবশার রাজা নাজ্জাশির কাছে।
  5. সলিত বিন উমর বিন আবদে শামস কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
  6. শুজা ইবনে ওয়াহাব আসাদি কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
  7. আল আলা আল হাদরামিকে বাহরাইনের শাসক মুনজির ইবন সাওয়া আল তামিমি’র কাছে।[৭৩][৭৪][৭৫]

শাসকদের মধ্য হতে বাদশাহ নাজ্জাসি ও মুনজির ছাড়া আর কেউ তখন ইসলাম গ্রহণ করেন নি।

মক্কা বিজয়

মুহাম্মাদ (সবুজ রেখা) ও রাশিদুন খলিফাদের (কালো রেখা) বিজিত এলাকা : বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য (উত্তর ও পশ্চিম) এবং সাসানীয়-পারস্য সাম্রাজ্য (উত্তর পশ্চিম)।

সুরা আন-নাজম এর শেষ আয়াত

দশ বছরমেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দু’ বছর পরেই ভেঙ্গে যায়।[৭৬][৭৭] খুজাআহ গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র, অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র।[৭৬][৭৭] একরাতে বকর গোত্র খুজাআদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।[৭৬][৭৭] কুরাইশরা এই আক্রমণে অন্যায়ভাবে বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে।[৭৫][৭৬] কোনো কোনো বর্ণনামতে কুরাইশদের কিছু যুবকও এই হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনার পর মুহাম্মাদ কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণ করেন এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যে কোনো একটি মেনে নিতে বলেন।[৭৮] শর্ত তিনটি হলো;

  • কুরাইশ খুজাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করবে।
  • অথবা তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।
  • অথবা এ ঘোষণা দিবে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করবে।[৭৮] কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশ তাদের ভুল বুঝতে পারলো এবং আবু সুফিয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্য দূত হিসেবে মদিনায় প্রেরণ করলো।[৭৫] কিন্তু মুহাম্মাদ কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করলেন।[৭৯]
৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরির রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো[৮০][৮১] এবং মুহাম্মাদ বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তবে দশজন নর এবং নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল। তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুহাম্মাদ এর কুৎসা রটাত।[৮২] তবে এদের মধ্য হতেও পরবর্তীতে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়।[৮১][৮৩] মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মাদ সর্বপ্রথম কাবাঘরে আগমন করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন।[৮১][৮৪][৮৫][৮৬] মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবং মুহাম্মাদ এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে। আল কুরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।[৫১][৮৭]

মক্কা বিজয়ের পর

মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মাদ হাওয়াজিন সম্প্রদায়ের আক্রমণের সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পান। তাদের মুহাম্মাদের সেনাবাহিনী অপেক্ষা দ্বিগুণ সেনা সদস্য ছিল। বনু হাওয়াজিনরা মক্কার পুরনো শত্রু ছিল। বনু সাকিফরা (তায়েফ নগরীর বাসিন্দারা) মক্কা-বিরোধী নীতি গ্রহণ করে এবং বনু হাওয়াজিনদের সাথে যোগ দেয়।[৮৮] মুহাম্মাদ হাওয়াজিন ও সাকিফদের হুনাইনের যুদ্ধে পরাজিত করেন।[৮]

মৃত্যু

মুহাম্মাদের সমাধি, যা রওজা নামে মুসলিমদের কাছে অধিক পরিচিত, মসজিদ এ নববী ,মদিনাসৌদি আরব
স্বর্ণখচিত সমাধিগৃহ (রওজা)
আয়িশা’র কক্ষে মুহাম্মাদের কবর

বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরি ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মাদ জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচণ্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির উপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়িশার গৃহে অবস্থান করতে থাকেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। স্ত্রী আয়িশার কোলে মাথা রেখে, তিনি আয়িশাকে তার সর্বশেষ পার্থিব সম্পত্তি (সাত কিংবা আট দিনার) দান করে দিতে বলেন (কথিত আছে তা তিনি বলেন মৃত্যুর এক দিন পূর্বে), এরপর তিনি তার জীবনের সর্বশেষ উক্তিটি উচ্চারণ করেন :

হে আল্লাহ, তুমি আর-রফিক আল-আ’লা (শ্রেষ্ঠ বন্ধু, সর্বোচ্চ আবাস বা সর্বোন্নত, স্বর্গের সর্বোচ্চ সঙ্গ)[৮৯][৯০][৯১]

— মুহাম্মাদ

অবশেষে ৮ই জুন ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে রবিবারে বা ১১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় আয়িশার গৃহে মৃত্যুবরণ করেন।[৯২] এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী তাকে গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশার ঘরের যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, জানাজার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।[৮][৯৩][৯৪][৯৫] পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের সময়ে, মসজিদে নববীকে সম্প্রসারণ করে মুহাম্মাদের কবরকে এর সম্প্রসারিত এলাকার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৯৬] বর্তমানেও মসজিদে নববীর অভ্যন্তরে তার কবর রয়েছে। মুহাম্মাদের কবরের পাশেই আরও দুটি কবর রয়েছে, সেগুলো হল যথাক্রমে ইসলামের প্রথম দুই খলিফা ও প্রখ্যাত সাহাবা আবু বকর ও উমরের, এর পাশে আরেকটি কবরের স্থান খালি রাখা হয়েছে, মুসলিমদের বিশ্বাস মতে সেখানে পৃথিবীতে পুনরায় প্রত্যাবর্তীত নবী ঈসাকে প্রকৃত মৃত্যুর পর সমাহিত করা হবে।[৯৪][৯৭][৯৮]

মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর

৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ-এর মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা যখন তার দাফনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন তখন মদিনার আনসারদের মধ্যে তার উত্তরসূরি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। উমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ দুজনেই আবু বকরের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেন। মদিনার আনসার ও মুহাজিররা অচিরেই তাদের অনুসরণ করে। আবু বকর এভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রথম খলিফা (খলিফা রাসুলুল্লাহ বা আল্লাহর রাসুলের উত্তরাধিকারী) হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং ইসলামের প্রচারের জন্য কাজ শুরু করেন।[৯৯] এর মাধ্যমে খিলাফত নামক নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। প্রথমে তাকে বিদ্রোহী আরব গোত্রগুলোকে দমন করতে হয় যারা ইসলাম ত্যাগ করে পূর্ব ব্যবস্থায় ফিরে গিয়েছিল।[১০০][১০১][১০২][১০৩] আবু বকরের ক্ষমতালাভের পর খুব দ্রুত সমস্যা মাথাচাড়া দেয় এবং তা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। মুহাম্মাদের জীবদ্দশাতেই কিছু ধর্মদ্রোহিতার ঘটনা ঘটে এবং এ সংক্রান্ত সর্বপ্রথম সংঘর্ষ তার জীবদ্দশাতেই হয়। ধর্মত্যাগের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তা আরবের প্রত্যেকটি গোত্রকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরো গোত্র ধর্মত্যাগ করে। কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে অস্বীকার না করলেও যাকাত দিতে অস্বীকারের ঘটনা ঘটে। অনেক গোত্রীয় নেতা নিজেকে নবী দাবি করা শুরু করে। ধর্মত্যাগ ইসলামি আইনে সর্বোচ্চ ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আবু বকর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে রিদ্দার যুদ্ধ শুরু হয়। মধ্য আরবের ধর্মত্যাগীদের নেতৃত্ব ছিল স্বঘোষিত নবী মুসাইলিমা। অন্যরা দক্ষিণ ও পূর্বের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বাহরাইনমাহরা ও ইয়েমেনে নেতৃত্বে দিচ্ছিল। আবু বকর বিদ্রোহ দমনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রাথমিক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। বিদ্রোহীদের শক্তিশালী বাহিনীগুলোর সাথে লড়াইয়ের জন্য খালিদের সেনাদের ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য সেনাদলগুলো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় ব্যবহার করা হত। আবু বকরের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে পশ্চিম ও মধ্য আরব (যা মদিনার নিকটবর্তী ছিল) নিষ্কণ্টক করা, এরপর মালিক ইবনে নুয়ায়রাহকে মোকাবেলা করা ও শেষে সবচেয়ে বিপদজনক শত্রু মুসায়লামাকে শায়েস্তা করা। বেশ কিছু ধারাবাহিক সাফল্যের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ শেষপর্যন্ত ইয়ামামার যুদ্ধে মুসায়লামাকে পরাজিত করেন।[১০৪] হিজরি ১১ সালে এ যুদ্ধ শুরু ও সমাপ্ত হয়। ১২ হিজরিতে আরব মদিনায় অবস্থান করা খলিফার নেতৃত্ব একীভূত হয়। বিদ্রোহী নবীদের যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে আবু বকর আরবকে ইসলামের অধীনে সুসংহত করেন এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন।

সংস্কারক হিসেবে মুহাম্মাদ

উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াটের মতে মুহাম্মাদের জন্য ধর্ম ব্যক্তিগত বা একক বিষয় ছিল না, “এটি তার ব্যক্তিত্ব পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ, যার মাঝে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি ধর্মীয় ও বুদ্ধিগত বিষয়ের পাশাপাশি সমসাময়িক মক্কার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের দিকেও খেয়াল রেখেছিলেন।”[১৫] বার্নার্ড লুইস বলেন ইসলামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রথা রয়েছে – মদিনায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মুহাম্মাদ এবং মক্কায় বিদ্রোহী হিসেবে মুহাম্মাদ। নতুন সমাজব্যবস্থায় প্রবর্তিত হওয়া সময় তিনি ইসলামকে বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করতেন, যা অনেকটা বিপ্লবের মত।[১৬]

ইসলামী বর্ণনামতে মুহাম্মাদের অলৌকিকত্ব

মুসলমানদের মতে মুহাম্মাদের অসংখ্য অলৌকিক ক্ষমতার মধ্যে প্রকাশ্য অলৌকিকত্ব সংখ্যা দশ হাজারেরও অধিক।[১০৫] প্রখ্যাত পণ্ডিত জালালুদ্দিন সুয়ুতির “খাসায়েসুল কুবরা” নামক গ্রন্থে মুহাম্মাদের মুজিযা সম্পর্কিত ঘটনাগুলো আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। আল কোরআনের সুরা ক্বামারে মুহাম্মাদের প্রার্থনায় চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে মুহাম্মাদ বললেন ‘এটা অমুকের শাহাদাতের স্থান, এটা অমুকের হত্যার স্থান… সাহাবীরা বলেন ‘রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিক সেদিক হয় নি।’ (মুসলিম) ইসলামের একটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে মুহাম্মাদের স্পর্শে এক সাহাবীর ভাঙা পা ভালো হয়ে যায়। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতিক’এর পা ভেঙে গেলে তিনি তা মুহাম্মাদকে জানালে মুহাম্মাদ তার পায়ের উপর হাত বুলালেন। সাহাবী বলেন, ‘এতে আমার পা এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেল যেন তাতে আমি কখনো আঘাতই পাই নি।’ (বুখারী) ইসলামের আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায় মুহাম্মাদ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে স্বল্প খাদ্যে হাজার মানুষকে পরিতৃপ্তি সহকারে ভোজন করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)

অমুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মুহাম্মাদকে একজন আদর্শ আইন নির্মাতা এবং মহামানব আখ্যা দিয়ে মুহাম্মাদ এবং ইসলামের ভূয়সী প্রশংসা করেন।[১০৬][১০৭][১০৮] ইতিহাসবিদ টমাস কার্লাইল[১০৯][১১০] এবং উইলিয়াম মন্টমেগেরি ওয়াট[১১১][১১২][১১৩][১১৪][১১৫] তাদের নিজ নিজ বইয়ে মুহাম্মাদকে ইতিহাসের একজন অন্যতম প্রভাবশালী ইতিবাচক সংস্কারক হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মাইকেল এইচ. হার্ট তার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একশ মনীষী নামক জীবনীগ্রন্থে মুহাম্মাদ কে প্রথম স্থানে রেখেছেন।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ