এক ঢিলে দুই পাখি

ঢাকার অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ ছিল গান নিয়ে। ক্যাসেটের দিনে বেশ সাফল্যের সঙ্গেই তাঁরা সংগীত প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছেন। ক্যাসেট থেকে সিডি, সেখান থেকে গান এখন চলে গেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। নতুন এ প্ল্যাটফর্মে এককভাবে সংগীত নিয়ে কাজ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাঁরা পরিবেশন করছেন নাটক। সেসবের ফুটেজ থেকে ইউটিউবের জন্যই বানাচ্ছেন সংগীতচিত্র। এ যেন এক ঢিলে অডিও প্রযোজকদের দুই পাখি শিকারের মতো।

অডিও প্রযোজকদের এ উদ্যোগকে অনেকে দেখছেন নেতিবাচকভাবে। তাঁদের যুক্তি, সংগীতে এককভাবে বিনিয়োগ, মনোযোগ ও যত্ন এখন আর আগের মতো নেই। সেটা চলে গেছে নাটকে। আর নাটকের জন্য নামকাওয়াস্তে বানানো গান গণ্য হচ্ছে কেবলই ইউটিউব ‘কনটেন্ট’ হিসেবে। তবে কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ মনে করেন, বড় বাজেটে সংগীতচিত্র বানাতে গিয়ে গানকে আগেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এখন চাইলেই সাদামাটা নির্মাণ মানুষকে টানে না। তিনি বলেন, ‘এখন যা হচ্ছে, তা কেবলই টিকে থাকার জন্য। তবে সব সময় বলে এসেছি, গান হচ্ছে উপলব্ধির বিষয়, দেখার নয়। পাশাপাশি এখনকার এ উদ্যোগগুলোকে আমি নেতিবাচকভাবে দেখি না।’ আগে একটি সংগীতচিত্র নির্মাণে ব্যয় হতো দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকাও। এতে নির্মিত হতো পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও। খরচের তুলনায় এ থেকে আয় হতো সামান্যই। এখন একই টাকায় বানানো যাচ্ছে ৪০ মিনিটের একটি নাটক ও একটি গান। এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে দুটি ভিডিও, আয় হচ্ছে অনেক বেশি অর্থ।

আগে সারা বছর নিয়ম করে কেবল গানই প্রকাশ করত অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এখন সেই জায়গা দখল করেছে নাটক। বছরে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি নাটক করছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এসবের অনেক নাটকেই গান থাকলেও এককভাবে গানের সংখ্যা কমেছে তাদের। মানের কথা বাদ রাখা যাক। কেন এ উদ্যোগ? জানা গেছে, আগে একটি সংগীতচিত্র নির্মাণে ব্যয় হতো দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকাও। এতে নির্মিত হতো পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও। খরচের তুলনায় এ থেকে আয় হতো সামান্যই। এখন একই টাকায় বানানো যাচ্ছে ৪০ মিনিটের একটি নাটক ও একটি গান। এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে দুটি ভিডিও, আয় হচ্ছে অনেক বেশি অর্থ।

অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ বলেন, ‘অডিও থেকে আয় কমে গেছে। নাটক ও গান একত্রে বানালে একই খরচে আয় বেশি হচ্ছে। গান কমে যাওয়ায় হয়তো সবার গান নিতে পারছি না, কিন্তু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারছে।’ আরেক প্রযোজক সিএমভির কর্ণধার শেখ সাহেদ আলী বলেন, ‘সিনেমায় গান থাকে, নাটকে থাকলে ক্ষতি কী? আমরা নাটকে গানকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি। ৫০টি নাটক করলে ৫০টি গানও হচ্ছে। ভালো শিল্পী-সুরকারকে নিয়ে গান করার চেষ্টা করি। বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। শুধু গান করলে আয় কম হয়, দুটো একত্রে করলে প্রতিষ্ঠান বাঁচে। যদিও নাটকে বেশি ফোকাস থাকে, কিন্তু আয়টাও বেশি হয়।’

Source:Daily Jugantor