কোভিড ভ্যাকসিন: মঙ্গলবার থেকে আবার গণটিকা শুরু, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকার মধ্যে কোনটি কোথায় দেয়া হবে

বাংলাদেশে ১৩ই জুলাই থেকে নতুন করে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে ৩৫ বছরের বেশি বাংলাদেশি যেকোন নাগরিক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে পারবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকল জেলা-উপজেলায় টিকা পৌঁছে দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে।

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে ঢাকা সিটিতে সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ থাকবে। এর বদলে মডার্না এবং ফাইজারের টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেছেন, এই মুহূর্তে সরকারের হাতে যে টিকার যোগান রয়েছে, তা দিয়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।

এরপর থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে টিকা আসতে থাকবে বলে তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন।

কোথায় মডার্না কোথায় সিনোফার্ম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক হক বলেছেন, দেশের সব ক’টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দেয়া হবে মডার্নার টিকা।

কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “যেহেতু মডার্না টিকাটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল। সে কারণে টিকা সংরক্ষণ ও প্রদানের সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মর্ডানা টিকা দেয়া হবে।”

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজারের টিকা এই মুহূর্তে ঢাকার মোট সাতটি কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চারটি মেডিক্যাল কলেজ এবং তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।

যেহেতু ফাইজারের টিকার পরিমাণ এক লাখ, ফলে মজুদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকার কার্যক্রম চলবে।

এরপর এসব কেন্দ্রে মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে।

সিনোফার্মের টিকা দেয়া হবে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে।

নিবন্ধনের প্রক্রিয়া ও টিকা পাওয়ার যোগ্যতা

টিকা দেয়ার জন্য আগের মতই সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে ৩৫ বছর এবং এর বেশি বয়সী যে কোন বাংলাদেশি নাগরিক নিবন্ধন করতে পারবেন।

নিবন্ধনের পর এসএমএস দেয়া হবে এবং তারপর নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে।

একমাস পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারবেন।

তবে, অধ্যাপক হক বলেছেন, টিকার ক্ষেত্রে কেন্দ্র পরিবর্তন করা চলবে না।

টিকা

অনেকে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ পাননি।

তিনি বলেছেন, “নির্দিষ্ট দিনের আগে পরে টিকা নেয়ার চেষ্টা করলে টিকা দেয়ার তথ্য ডাটাবেসে আপলোড হবে না, ফলে টিকা কার্ড বা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট পাবেন না।”

অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কিছু টিকা অগাস্টে পাওয়ার কথা রয়েছে। সেটি এলে যারা দ্বিতীয় ডোজ পাননি তারাও এ টিকা দিতে পারবেন।

এছাড়া তিনি বলেছেন, সৌদি আরব, কুয়েতসহ যেসব দেশে চীনের টিকা নিয়ে সমস্যা রয়েছে সেসব দেশে যারা যাবেন তাদের ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। তাদের মর্ডানার টিকাও দেয়া যাবে।

কারণ ওই দেশগুলোতে মর্ডানার টিকার সনদও গ্রহণ করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরের বিদেশগামী মানুষেরা সিটি কর্পোরেশন এলাকার কেন্দ্রে গিয়ে এই টিকা নিতে পারবেন।

এছাড়া যারা সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু টিকা নেননি, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা হচ্ছে যে কেন্দ্রে নিবন্ধন করেছিলেন টিকা কার্ড নিয়ে ওই কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন।

কত টিকা দেয়া হয়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১১ই জুলাই পর্যন্ত কোভিশিল্ড, সিনোফার্ম এবং ফাইজার মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি দুইলাখ ৯৫ হাজার ৩৮২জন মানুষ টিকা নিয়েছেন।

জুলাই মাসের শুরুতে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মর্ডানার ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ ডোজ টিকা এসেছে।

এর বাইরে সরকার চীনের কাছ থেকে কিনছে দেড় কোটি ডোজ, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ২০ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে।

এছাড়া উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা এসেছে।

কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ডোজ এবং মর্ডানার ২৫ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে।

সব মিলে দেশে মোট টিকার মজুদ ৫৮ লাখ ৫৪ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি। ।

এছাড়া দেশে আগে আসা টিকার মধ্যে এই মুহূর্তে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড অবশিষ্ট রয়েছে ৯০ হাজার ৭২ ডোজ।

অধ্যাপক হক বলেছেন, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কিছু টিকা অগাস্টে পাওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে এ বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড দিয়ে প্রথম গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়।

মূলত ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ডের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

কিন্তু ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর অদূর ভবিষ্যতে দেশটি থেকে বাংলাদেশে টিকা রপ্তানির সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

ভারত থেকে টিকা আসা অনিশ্চিত হয়ে যাবার মুখে ২৬শে এপ্রিল বাংলাদেশে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর ৫ই মে টিকার নিবন্ধনও বন্ধ করে দেয়া হয়।

জুলাই মাসে পুনরায় নিবন্ধন শুরু করে সরকার।