সড়ক আইন আরও দুর্বল হচ্ছে

দেশের সড়কব্যবস্থার উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। সড়কে দামি দামি বাসও নামছে। এরপরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধের মধ্যে যানবাহনের সীমিত চলাচলেও প্রতিদিন সড়কে প্রাণ ঝরছে।

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনতে একটি কঠোর আইনের দাবি দীর্ঘদিনের। তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নামলে বিষয়টি পুনরায় সামনে আসে। ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কঠোর শাস্তির বিধানসংবলিত একটি আইন সংসদে পাস করে। এরপর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আইনটি এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। পরিবহনমালিক–শ্রমিকদের দাবির মুখে এখন আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি সংসদে পাস হলে প্রায় সব অপরাধের শাস্তি কমবে।

আইনটি কার্যকরের আগেই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ায় কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে।
এক. ২০১০ সাল থেকে আইনটি প্রণয়নে আট বছর ব্যয় করেছে সরকার। এর মধ্যে চারবার খসড়া করা হয়েছে। তাহলে কি শিক্ষার্থীদের খুশি করতে সরকার কঠোর আইনটি করেছে?

দুই. এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। কিন্তু সরকারের ওপর পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের চাপ আছে। তাই আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের মাধ্যমে তা শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাহলে কি আইনের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা মূল লক্ষ্য নয়?

তিন. সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, বর্তমান আইনে কিছু কারিগরি ত্রুটি ও শাস্তির বিধান কঠিন হয়ে গেছে। এ জন্য সংশোধন দরকার। তাহলে কি আট বছর ধরে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং বিশেষজ্ঞরা মিলে একটা পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের সক্ষমতার ঘাটতি আছে?

গতি হারিয়েছে সড়ক আইন
প্রয়োগে সময়ক্ষেপণের কারণে এমনিতেই আইনটি গতি হারিয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি কমানোর উদ্যোগে তা–ও হারাচ্ছে।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। প্রথমে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন। পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলন ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তিন বছর পর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির চিত্র বদলায়নি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে চলাচল করার পরও গত ঈদুল ফিতরে ৩২৩ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। ২০২০ সালে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী ৭০৬ জন। শিক্ষক নিহত হয়েছেন ১০৪ জন।

দেশের পরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরে ১৯৩৯ সালের ‘বেঙ্গল মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্ট’ এবং পরে ১৯৮৩ সালে মোটরযান অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এই আইনে অপরাধের সাজা খুব কম ছিল। এ জন্য আইন মানার প্রবণতাও কম বলে সব মহলে আলোচিত। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ সাজার বিধান যুক্ত করার দাবি—এই চিন্তা থেকেই এসেছিল। সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে চালকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছরে নেমে আসে।

২০১০ সালে নতুন সড়ক আইনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চার দফা খসড়া প্রণয়ন করা হয়। শুরুতে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যক্তির মৃত্যুর দায়ে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রতি খসড়ার সময়ই পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শাস্তি কমানোর দাবি এসেছে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে আইন পাস হয়।

অবশ্য আইন পাস হলেও তা এক বছরের বেশি সময় পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর কার্যকর করে সরকার। কিন্তু সচেতনতার কথা বলে প্রয়োগ দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। আসলে সচেতনতা নয়, পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে সারা দেশে অচলাবস্থা তৈরি করায় আইনটির প্রয়োগ আটকে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দুই দফা মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ধারার প্রয়োগ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তখনই আইনটি সংশোধনের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। এরপর থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশোধনের তৎপরতা শুরু হয়।

পুরোপুরি প্রয়োগের আগেই সংশোধনের উদ্যোগ
গত বছরের শেষের দিকে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের একটি খসড়া তৈরি করে সরকার। এরপর এটি গত মে পর্যন্ত জনগণের মতামতের জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। এখন এটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলার অপেক্ষায় আছে। এরপর সংশোধনী যাবে জাতীয় সংসদে। তবে সংশোধনীর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনমত নেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা।

বর্তমান সড়ক আইনে ৪২টি ধারায় অপরাধ এবং কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়ার পর পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ৩৪টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে ২৯টি ধারাই আমলে নিয়ে সংশোধনের সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। আইন নিয়ে পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের এই দর–কষাকষির ফলে এ–সংক্রান্ত বিধিমালাও তিন বছরে প্রণয়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ধারার জরিমানার পরিমাণ কমানো। কারণ, পুলিশ বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জরিমানা আরোপ করে। কারাদণ্ড দেয় খুব কম। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মূল বিচার হয় ফৌজদারি আইনে, যা সময়সাপেক্ষ। বেশির ভাগ মামলাই নিষ্পত্তি হয় না। তাদের এই কৌশল বাস্তবায়নে সরকার সাড়াও দিয়েছে।

আইনে চালকদের কিছু কিছু জরিমানা অত্যধিক বেশি মনে হয়েছে। এ জন্য তা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, আইনে চালকদের কিছু কিছু জরিমানা অত্যধিক বেশি মনে হয়েছে। এ জন্য তা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বাস্তবতা এবং আগের আইন বিশ্লেষণ করেই সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সবচেয়ে শক্ত ধারাগুলো শিথিলের সুপারিশ
সড়ক আইনের সবচেয়ে কঠোর ধারা হচ্ছে ৮৪, ৯৮ ও ১০৫। এগুলো অজামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এবার ৮৪ ও ৯৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য করার সুপারিশ এসেছে। এমনকি ৯৮ ধারার অপরাধকে আপসযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।

১০৫ ধারায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সংশোধনের সুপারিশে কারাদণ্ড পাঁচ বছর রেখে জরিমানা কমিয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

৯৮ ধারাটিও সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত। এই ধারায় নির্ধারিত গতির অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালালে, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, ওভারলোডিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা হলে এর জন্য চালক, কন্ডাক্টর বা সহায়তাকারীর তিন বছরের কারাদণ্ড কিংবা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নতুন প্রস্তাবে ওভারলোডিং শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত গতি শব্দের পরিবর্তে দ্রুত চালনা শব্দ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কারাদণ্ড ও জরিমানা পরিবর্তন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে আইনের এই ধারায় সাজা দেওয়া কঠিন। কারণ, কতটা দ্রুতগতিতে চললে অপরাধ হবে—এর ব্যাখ্যা নেই। ওভারলোডিং বাদ দেওয়ায় ধারাটি দুর্বল হয়ে গেছে।

৮৪ ধারায় মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনের দায়ে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এটি পরিবর্তন না করলেও জামিনযোগ্য ধারায় রূপান্তর এবং আপসের প্রস্তাবে এটিও খুব একটা কাজে আসবে না।

পরিবহনমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি জাতীয় পার্টির নেতা মসিউর রহমান। আর সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের নেতা খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ। এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, বিপুল জরিমানা দিয়ে চালক-মালিকেরা যানবাহন চালাতে পারবেন না। এ জন্য তাঁরা সংশোধনের দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, এমন কঠোর আইন প্রয়োগ করা কঠিন। এ জন্যই সরকার মালিক-শ্রমিকদের উদ্বেগ আমলে নিয়ে সংশোধন করছে।

চালক-মালিকদের স্বার্থেই প্রায় সব পরিবর্তন
আইনে যতগুলো ধারা সংশোধনের মাধ্যমে শিথিল করার সুপারিশ করা হয়েছে, একটি বাদে সব কটিই পরিবহনচালক, মালিক ও কর্তৃপক্ষের শাস্তিসংক্রান্ত। একটি ধারা শুধু জনগণ সম্পৃক্ত।

আইনে সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাড়া লাইসেন্স পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ আছে। সংশোধনীতে তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহনের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চালককে পঞ্চম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

চালকের লাইসেন্স ব্যতীত মোটরযান চালনার দায়ে আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা আছে। তবে তা সংশোধন করে সাজা ছয় মাস বহাল রেখে জরিমানা ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সমিতি লাইসেন্স তৈরি, সরবরাহ ও নবায়ন করলে ছয় মাস থেকে দুই বছর কারাদণ্ড, এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এটি শিথিল করে এক থেকে তিন লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। কোনো চালক লাইসেন্স বিকৃত বা পরিবর্তন করতে পারবেন না—এই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

নকল, ভুয়া ও জাল লাইসেন্স ব্যবহার করার দায়ে বর্তমান আইনে ছয় মাস থেকে দুই বছর এবং এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এটি কমিয়ে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান আইনে লাইসেন্সবিহীন কিংবা লাইসেন্স বাতিল হওয়া ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে মালিকের তিন মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এটি সংশোধন করে কারাদণ্ড বাদ দেওয়া এবং শুধু ১০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিটি গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা থাকবে এবং নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না। এই আইন অমান্যের শাস্তি এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং চালকের দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটা যাওয়ার কথা আছে আইনে। কিন্তু এটি শিথিল করে শুধু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকারের অনুমোদনহীন নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ ছোট যান মহাসড়কে চলাচল করলে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলে হয়েছে আইনে। এখন তা শুধু এক মাসের কারাদণ্ডে নামিয়ে আনার প্রস্তাব এসেছে। অথচ এসব অবৈধ যান মহাসড়কে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করা হয়।

নির্ধারিত স্থানের বাইরে যানবাহন থামানো, পার্কিং ও যাত্রী-মালামাল ওঠানামার দায়ে শাস্তি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। চালকের এক পয়েন্ট কর্তন। কিন্তু এই অপরাধের জরিমানা কমিয়ে এক হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

শাস্তি দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। ফাঁসি দেওয়ার পরও কি খুন কমেছে? আসলে দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনতা সৃষ্টিসহ আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতিপরিবহনশ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। আইনটি শিথিল করার সুপারিশ আসায় খুশি তাঁরা। তিনি বলেন, শাস্তি দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। ফাঁসি দেওয়ার পরও কি খুন কমেছে? আসলে দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনতা সৃষ্টিসহ আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

অন্যান্য পরিবর্তন
দুর্ঘটনার পর জনরোষ ঠেকাতে এবং যানবাহনের ক্ষতিসাধন রোধে আইনে ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এটি মূলত সাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এই ধারা লঙ্ঘন করলে ব্যক্তিকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সংশোধনী প্রস্তাবে জরিমানা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমান আইনে জরাজীর্ণ, পরিবেশদূষণকারী ও ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো যানবাহনকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু এই ধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও মালিকদের দৌরাত্ম্য রোধে আইনে মিটার না মেনে যেকোনো গন্তব্যে যাত্রী বহন না করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সাজার কথা বলা হয়েছে যেসব মালিক দৈনিক জমার অতিরিক্ত চালকদের কাছ থেকে আদায় করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও। এখন তা সংশোধন করে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব এসেছে।

যে সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে, সেটা পুরোপুরি পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের পক্ষে গেছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যাননিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে, সেটা পুরোপুরি পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের পক্ষে গেছে। আসলে পুলিশ ও প্রশাসনের মতো পরিবহন খাতের নেতারাও অনেক প্রভাবশালী।

সরকার জনগণের চেয়ে তাঁদেরকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এ জন্য আইনের সংশোধনীতে তাঁদের খুশি করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, সংশোধনীর বিষয়ে তাঁরাও তাঁদের মতামত দিয়েছেন। সরকার জনগণের দাবি কতটা রাখে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন। তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই দ্রুত আইনটি পাস হয়েছে। এটি সংশোধন করে নখ-দাঁতহীন করা নিরাপদ সড়কের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করার শামিল।

Source: Prothomalo