ফলনের পর দামেও বিপর্যয়
পেয়ারার উৎপাদন কমেছে। সঙ্গে এবার দামও কম। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
দুই পাশে পেয়ারার বাগান। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ভিমরুলী খাল। প্রতিবছর আষাঢ়ের শেষের দিকে কিংবা শ্রাবণের প্রথমে এই খালেই বসে ভাসমান পেয়ারার বাজার। শত শত চাষি নৌকায় পেয়ারা এনে তা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সেই পেয়ারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলী ও ডুমুরিয়ার ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ভিড় জমান।
কিন্তু এবার সেই হাটের জৌলুশে ভাটা পড়েছে। কারণ, হাটে পাইকারি ব্যবসায়ী নেই। করোনা মহামারিতে বিধিনিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পেয়ারা কিনতে যেতে পারছেন না। এ ছাড়া এবার ছিটপড়া রোগের কারণে পেয়ারার উৎপাদনও অনেক কম। সব মিলিয়ে ভালো নেই পেয়ারাচাষিরা।
সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভিমরুলী গ্রামের পেয়ারাচাষি সুমন হালদার বলেন, এখন পেয়ারার ভরা মৌসুম। আগে এ সময় ভিমরুলীতে প্রতিদিন পাঁচ-সাত হাজার মণ পেয়ারা বিক্রি হতো। করোনার কারণে তা স্থবির হয়ে গেছে। ভাসমান হাটে দূরদূরান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। ফলে প্রতিদিন মাত্র এক থেকে দেড় হাজার মণ পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ঝালকাঠির কীর্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাফুরকাঠি, জগদীশপুর, মীরাকাঠি, শাখাগাছি, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর ও শিমুলেশ্বর গ্রামে যুগ যুগ ধরে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এবার এই ১৩টি গ্রামের ৩৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাত করতে কয়েক হাজার মৌসুমি পাইকার ও শ্রমিক যুক্ত। করোনার বিরূপ প্রভাবের পাশাপাশি দুই বছর ধরে পেয়ারার ফলন কম।
সদর উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের নির্মল মিস্ত্রির ১০ বিঘা জমিতে দুটি পেয়ারাবাগানে এবার ২০০ মণের মতো পেয়ারা হয়েছে। গত বছর ধরেছিল প্রায় ৩৫০ মণ। এবার পেয়ারা চাষের খরচ উঠবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন নির্মল মিস্ত্রি।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিফাত সিকদার বলেন, সাধারণত মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারাগাছে ফুল আসে। কিন্তু এবার ফুল দেরিতে এসেছে। বৈশাখ মাসে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়। কিন্তু এই মাসের পুরোটা প্রচণ্ড খরার কারণে পেয়ারায় ছিটপড়া রোগ হয়।
১৪ জুলাই সকালে কীর্তিপাশা, ডুমুরিয়া ও ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান পেয়ারার হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেয়ারাচাষিরা বাগান থেকে পেয়ারা পেড়ে নৌকায় করে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন। কোনো চাষির নৌকায় তিন মণ পেয়ারা, আবার কারও নৌকায় আধা মণ। পাইকারদের আনাগোনা কম। আর ভাসমান হাট পর্যটকশূন্য। এই হাট ঘিরে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ।
হাটে কথা হয় ভিমরুলী গ্রামের পেয়ারাচাষি মনোতোষ ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ছিটপড়া রোগে ফলন কম হয়েছে। সঙ্গে দামও কম। আগে প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি হতো আট শ থেকে এক হাজার টাকায়। এবার তা কমে ৬০০ টাকায় ঠেকেছে।
হিমানন্দকাঠির পাইকারি ব্যবসায়ী সোবাহান মৃধা বলেন, ‘দাম কম থাকায় এবার লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।’
কৃষি কর্মকর্তা রিফাত সিকদার বলেন, পেয়ারাচাষিদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাঁদের বিনা মূল্যে উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
Source: Prothomalo