কুমিল্লায় টিকাকেন্দ্রে নারীদের উপচে পড়া ভিড়

কুমিল্লায় জেনারেল হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে খুদে বার্তা (এসএমএস) পেয়ে আজ বুধবার দিনভর ৮ হাজার ৩২০ জন টিকা নেওয়ার জন্য এসেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী। টিকা নেওয়ার জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে ছিলেন তাঁরা। হাসপাতালের ছয়টি বুথে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের সবার মুখেই মাস্ক ছিল। ‘মুখে মাস্ক নাই তো, টিকা নাই’, এমন প্রচারণা চালিয়ে সফল সিভিল সার্জন কার্যালয়। টিকাদানকে কেন্দ্র করে সদর হাসপাতাল সড়কে যানজট লেগেই ছিল।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সমন্বয়ক চিকিৎসক হাসান মাহমুদ ইকবাল জানান, বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ১০ হাজার ব্যক্তিকে টিকা নিতে আসার জন্য খুদে বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩২০ জন টিকা নিতে আসেন। তাঁদের ৬০ শতাংশই নারী। নগরের নারীদের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার মানুষের জটলা দেখা যায়। তাঁদের সবার মুখে মাস্ক, হাতে নিবন্ধনের কাগজ। টিকাদান শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। তার আগেই টিকার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। কার আগে কে দাঁড়াবেন, এটা নিয়েও চলে ঠেলাঠেলি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে দুটি বুথে দুই সহস্রাধিক মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এর মধ্যে দুটি সারি নারীদের।

বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ১০ হাজার ব্যক্তিকে টিকা নিতে আসার জন্য খুদে বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩২০ জন টিকা নিতে আসেন। তাঁদের ৬০ শতাংশই নারী।

নগরের মনোহরপুর এলাকার বাসিন্দা আসমা আক্তার বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটায় টিকা দিতে এসেও দেখি আমি ৫০০ জনের পেছনে। একসঙ্গে এত লোক টিকা দিতে আর কখনো দেখিনি।’ এই লাইনে দাঁড়ানো অপর্ণা সেন ও নন্দিতা দাস নামের দুই নারী বলেন, ব্যবস্থাপনা সুন্দর। কিন্তু মানুষ বেশি।

দুপুর ১২টার দিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে চারটি বুথে দেখা গেছে, সুশৃঙ্খলভাবে নারী-পুরুষ টিকা নেওয়ার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের একজন নগরের রেসকোর্স এলাকার ব্যবসায়ী মাহবুব আলম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘এত মানুষ। মনে হয়, লাইন শেষই হচ্ছে না।’ তিনিও সকাল ১০টায় খুদে বার্তা পেয়ে টিকা নিতে আসেন।

জেলা করোনাবিষয়ক ফোকাল পারসন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কাল বৃহস্পতিবার টিকার জন্য কিছু কম লোককে ডাকা হবে। আগে যাঁরা বাকি ছিলেন, তাঁদের দেওয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া যাবে। সবাই সকাল নয়টার মধ্যে এসে ভিড় করেন। যে কারণে মানুষের ভিড় বেশি। মানুষের মধ্যে ধারণা, পরে এলে মনে হয় টিকা পাবেন না। আসলেই বিষয়টি সে রকম না। টিকার যথেষ্ট মজুত আছে। মানুষ টিকা নিতে এখন প্রবল আগ্রহী। পুরো টিম টানা কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সবখানেই গিয়ে মনিটরিং করছেন।

কুমিল্লা জেলায় ৪ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এসেছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৯৮৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৪০৫ জন। মারা গেছেন ৭৫৭ জন। আজ এক দিনে ২ হাজার ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৬। এদিন করোনায় মারা গেছেন ৭ জন।

Source: Prothomalo