নিয়ন্ত্রণ যেন উদ্ভাবন আটকে না দেয়

ইতিহাস সরলরেখায় চলে না। টেলিগ্রাফ প্রযুক্তি ১৯ শতকে যেভাবে দূরত্ব ঘুচিয়ে মানুষের সময় বাঁচিয়েছিল, সেভাবে আজ ডিজিটাল অর্থ মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন হয়ে আসছে। মহামারির কারণে এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বলা যায়, এর প্রভাব টেলিগ্রাফ প্রযুক্তির মতোই সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

ডিজিটাল মুদ্রার দ্রুত বিকাশ ঘটছে। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তন করছে। আবার অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সিও বাজারে চালু হয়েছে, যদিও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবর্তিত ই-মুদ্রা ডিজিটাল নোট হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এর সুবিধা হলো মানুষ চাইলেই এ মুদ্রায় অবৈধ লেনদেন করতে পারবে না। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতেও ডিজিটাল লেনদেন চালু হচ্ছে। যেমন কেনিয়ার মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা এমপেসা ও বাংলাদেশের বিকাশের কথা বলা যায়। এ ব্যবস্থা মূল্যের ডিজিটাল সংস্করণ, স্রেফ ই-মেইলের মতো এক বা একাধিক ক্লিকেই তা আরেকজনের কাছে পাঠানো যায়। অনেক ক্ষেত্রে এক দেশ থেকে আরেক দেশেও তা পাঠানো সম্ভব। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ঠিক এদের মতো নয়।

এ ব্যবস্থা এখন বাস্তব হয়ে উঠেছে। অন্তত ১১০টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই ই-মুদ্রার প্রচলন বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে আফ্রিকা এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এ ব্যবস্থার সম্ভাবনা অসীম। ই-মুদ্রার কল্যাণে গ্রামের একজন কারিগর সহজেই শহরের খদ্দেরের কাছ থেকে পারিশ্রমিক লাভ করতে পারছেন। এমনকি প্রবাসী শ্রমিকেরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই পরিজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন। পরিষেবা বিল দেওয়ার জন্য এখন আর ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরতে হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংক হিসাব ছাড়াই এসব হচ্ছে। ব্যাংকিংয়ের আওতার বাইরে থাকা মানুষ নিরাপদে সঞ্চয় যেমন করতে পারছেন, তেমনি লেনদেনের বিবরণীর কল্যাণে ক্ষুদ্রঋণ পাচ্ছেন। অর্থের সুনির্দিষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে সরকারের পক্ষে আরও সুচারুভাবে করারোপ এবং রাজস্ব পুনর্বিতরণ করা সম্ভব।