মেসির চ্যালেঞ্জে আগেই হার মেনে নিলেন দানি আলভেজ

মজা করেই কথাটা বলেছিলেন লিওনেল মেসি, তবে কথাটায় মেসির জেতার মনোভাবও ফুটে ওঠে। বার্সেলোনা থেকে বিদায় তো নিশ্চিত হয়ে গেছেই, পরশু ক্লাবে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মজা করে মেসি বলেছিলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতার রেকর্ডে শীর্ষে থাকা দানি আলভেজকে পেছনে ফেলতে চান তিনি।

বার্সা ছেড়ে যে ক্লাবেই যান, আলভেজকে পেছনে ফেলাই হবে মেসির একটা বড় উদ্দেশ্য। আলভেজকে ‘চ্যালেঞ্জই’ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি!

কথাটা বলার সময় মেসির মুখের হাসিই বলে দিচ্ছিল, জয়ের ইচ্ছা তাঁর সব সময়ই আছে, তবে সেটিতে আলভেজকে টেনে এনে একেবারে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দেওয়ার কথাটা মজা করেই বলেছেন ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। আলভেজ আর তাঁর সম্পর্কটাই যে তেমন!

৩৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানও কম যান না! ইনস্টাগ্রামে মেসিকে নিয়ে পোস্টে মজা করেছেন তিনিও। তবে মজাটা অন্যভাবে। তাঁর চোখে ‘সর্বকালের সেরা’ মেসির কাছে এরই মধ্যে হার মেনে নিয়েছেন আলভেজ।

আলভেজ-মেসির সম্পর্কটা কেমন, বার্সার সমর্থকদের তো সেটা জানাই, ইউরোপের ফুটবলে খোঁজখবর রাখা যে কেউই সে নিয়ে বলতে পারবেন। ২০০৮ সালে বার্সায় যান আলভেজ, এরপর পেপ গার্দিওলার অধীনে বার্সার সোনালি সময়ের শুরু থেকে আট বছর মাঠের ডান পাশে মেসি-আলভেজ যুগলবন্দী চোখ জুড়িয়েছে। মাঠের বাইরে নজর কেড়েছে দুজনের দারুণ বন্ধুত্বও।

অনেকে বলেন, ২০১৫ সালের পর মেসির বার্সায় আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার একটা বড় কারণ ডান পাশে আলভেজের মতো একজন না থাকা। মেসির কত গোলে শেষ পাসটা (অ্যাসিস্ট) এসেছে আলভেজের পা থেকে, কত আক্রমণ গড়ার পথে আলভেজকে সঙ্গী করে প্রতিপক্ষকে ঘোল খাইয়েছেন মেসি!

দুজনের রসায়ন এমন ছিল যেন চোখের পলকে চোখের ভাষা পড়ে নিতে পারতেন তাঁরা। যেন টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ ছিল দুজনের! প্রতিপক্ষ বক্সের সামনে মেসি-আলভেজের ওয়ান-টু কোন ফুটবলপ্রেমীর মন রাঙায়নি? জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর বোর্ডের ওপর বিরক্ত হয়ে ২০১৬ সালে আলভেজ বার্সা ছাড়লেও মেসি-আলভেজের বন্ধুত্বে টান পড়েনি একটুও।

দুদিন আগে টোকিও অলিম্পিকের ফাইনালে স্পেনকে হারিয়ে ব্রাজিলকে সোনা এনে দিয়েছেন আলভেজ। এদিকে ইউরোপে তখন মেসির বার্সা ছাড়ার খবরে তোলপাড়। টোকিওতে সোনা জেতার পরই সেদিন মেসি-বার্সার বিচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আলভেজকে। দিয়ারিও স্পোর্তকে আলভেজ সেদিন বলেছিলেন, ‘মেসি আর বার্সার জন্য খুব খারাপ লাগছে। দুই পক্ষের কারও জন্যই (বিচ্ছেদের জন্য) সময়টা ভালো ছিল না। মেসিকে ছাড়া বার্সা আর একই রকম থাকবে না। কারণ, মেসিকে নিয়ে বার্সা একরকম, মেসিকে ছাড়া পুরোপুরিই ভিন্ন।’

তবে মেসির নতুন চ্যালেঞ্জে রোমাঞ্চ জানিয়ে আলভেজ তখন বলেছিলেন, ‘তবে (বিচ্ছেদ হলেও) বার্সা বার্সাই থাকবে, মেসি তো মেসিই। মেসি আর বার্সার জন্য এটা নতুন এক চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জই আপনাকে আরও ভালো হতে সাহায্য করে। কারণ, এটা আপনাকে আরামের জায়গা থেকে বের করে আনে।’

পরশু বার্সায় নিজের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মেসিও বললেন চ্যালেঞ্জের কথা। আর চ্যালেঞ্জের কথায় চলে এল বন্ধু আলভেজের প্রসঙ্গ। বার্সা ছেড়ে ইউরোপেরই কোনো ক্লাবে যেহেতু যাচ্ছেন, বার্সার মুখোমুখি হওয়ার দরকার পড়তে পারে মেসির।

সেটি নিয়ে প্রশ্নে ৩৪ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন বলেছিলেন, ‘আমি ক্যারিয়ারের শেষ বছরগুলো শিরোপার উদ্‌যাপনে শেষ করতে চাই। দানি আলভেজকে অভিনন্দন জানাই, মাত্রই অলিম্পিক পদক জিতেছে ও। (হেসে) ওকে হুঁশিয়ার করছি, আমি শিরোপাসংখ্যায় ওকে ধরব, ওকে পেরিয়ে যাওয়ার জন্য লড়ে যাব।’

প্রসঙ্গত, ক্যারিয়ারে প্রথমবার অলিম্পিকে সোনার পদক জিতে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ক্যারিয়ারে আলভেজের শিরোপাসংখ্যা হয়েছে ৪৩টি। ফুটবল ইতিহাসে আর কোনো খেলোয়াড়ের এত শিরোপা জেতার রেকর্ড নেই। তালিকায় ২ নম্বরে কদিন আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জেতা মেসি। কোপা আমেরিকার সেই শিরোপা মেসির ক্যারিয়ারের ৩৮তম।

মেসির এই মজা করে ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জের জবাবে আলভেজও সকৌতুক। ইনস্টাগ্রামে বার্সায় দুজনের গোল উদ্‌যাপনের মুহূর্তের ছবি দিয়ে মেসির উদ্দেশে আলভেজের লেখা, ‘সর্বকালের সেরা তুমি। তুমি চাইলে যেকোনো সময়ই আমাকে পেরিয়ে যেতে পারবে। ধরে নিয়ো সেটা তোমার জন্য আমার আরেকটা ‘অ্যাসিস্ট’ (হাসির ইমোজি) আমার মেয়ের পর তোমার সঙ্গেই আমার জুটিটা সবচেয়ে ভালো জমে (জিবে কামড় দেওয়ার ইমোজি)।’

কৌতুক একপাশে রেখে এরপর মেসিকে ভালোবাসাই জানিয়েছেন আলভেজ, ‘আমাদের যা কিছু দিয়েছ, সেটার জন্য, আমাদের সঙ্গে এত কিছু ভাগাভাগি করার জন্য, আমাকে তোমার গল্পের অংশ বানানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার সেরা হয়ে ওঠার সময়ে তোমার খুব কাছে থাকা কী দারুণ সম্মানের একটা ব্যাপার! সিলভিনিওকে (২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বার্সায় খেলা সাবেক ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক) ধন্যবাদ আমাদের মধ্যে যোগাযোগ করানোর জন্য।’

মেসির সামনের দিনগুলোর জন্য শুভকামনা তো জানিয়েছেনই, মেসি-নেইমারদের প্রিয় ‘পাগল’ আলভেজ সব সময় মেসির পাশেই থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, ‘ডন লিও মেসি, তুমি যেখানেই যেতে চাও, সেখানেই ইতিহাস রচনা কোরো। একটা পাগল এখান থেকে সব সময় তোমার পাশে থাকবে। প্রতিমুহূর্তেই থাকবে, বিশেষ করে থাকবে যে মুহূর্তগুলো তোমার ভালো কাটবে না, সেগুলোতে। পাগলটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে, পাপিতো।’

Source: Prothomalo