কুলসুমের বদলে মিনুর সাজা ভোগ: দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব

খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর বদলে মিনু আক্তারের সাজা ভোগ, মিনুর মৃত্যু এবং কুলসুমীকে গ্রেপ্তার ও তাঁর স্বীকারোক্তিকে কেন্দ্র করে হওয়া দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। নিহত মিনুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং গ্রেপ্তার কুলসুমীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ কেসডকেট নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক জুবায়ের মৃধা ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম।কারাগারের মহিলা ওয়ার্ড পরিদর্শনের সময় কুলসুমের বদলে মিনুর প্রায় তিন বছর সাজা ভোগের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। কয়েদি রেজিস্ট্রারের ছায়ালিপিসহ গত ২১ মার্চ চট্টগ্রামের আদালতে আবেদন দেন চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার। পরদিন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (চতুর্থ আদালত) আদালতে মিনুকে হাজির করা হয়। সেদিন দেওয়া মিনুর বক্তব্য অনুযায়ী, মর্জিনা নামের এক নারী তিন বছর আগে ডাল-চাল দেবেন বলে তাঁকে ঘর থেকে নিয়ে এসে জেলে ঢুকিয়ে দেন। কুলসুমকে তিনি চেনেন না। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের আদালত থেকে চিঠিসহ উপনথি গত ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। নথিতে যুক্ত প্রতিবেদনের ভাষ্য, প্রকৃত আসামি কুলসুমের পরিবর্তে মিনু আক্তার সাজা ভোগ করছেন। অবশ্য বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে কুলসুম হিসেবে মিনু ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টে আপিল করেন। উপনথি পৌঁছার পর বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে।

এর ধারাবাহিকতায় ৭ জুন হাইকোর্ট মিনু আক্তারকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে প্রকৃত অপরাধী কুলসুম আক্তারকে গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিতে প্রতারণার অভিযোগ বিষয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীকে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারী আদালতে হাজির হন।

এ দিকে হাইকোর্টের আদেশের পর গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার। কারামুক্তির পর ৪ জুলাই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় দেন মিনু। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৯ জুন একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। আর খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত কুলসুমকে ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় কুলসুমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তিনি জবানবন্দিও দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের মৃধা।

অন্যদিকে মিনুর আপিল ২৯ জুন হাইকোর্টে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত কয়েদি শনাক্তে বিদ্যমান পদ্ধতিতে কারাবন্দীর আঙুলের ছাপ, হাতের তালুর ছাপ ও চোখের মণি স্ক্যানিং ব্যবস্থাযুক্তসহ বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবস্থাপনা চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন। পাশাপাশি ৪ আগস্ট শুনানির জন্য দিন রাখেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেদিন শুনানি হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

শুনানিতে মিনুর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সম্পূরক আবেদন দাখিল করে কুলসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ নথিপত্র আদালতে দাখিলের আরজি জানান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। এ ছাড়া যেসব আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, তাঁদের পক্ষে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ সময়ের আরজি জানান। শুনানি নিয়ে আদালত নথিসহ পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি যেসব আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, তাঁদের ১ সেপ্টেম্বর ভার্চ্যুয়ালি আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

Source: Prothomalo