চকরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম নাছির উদ্দিন ওরফে নোবেল (৪০)। তিনি পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নিহত নাছিরের পরিবারের অভিযোগ, নির্বাচনে নাছির উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরী এ হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন দিয়েছেন।

নাছিরের চাচাশ্বশুর আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জামাতাকে হত্যার পেছনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরীর ইন্ধন আছে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে পশ্চিম সিকদারপাড়ার কিছু জমি নাছির উদ্দিন নোবেল পক্ষের লোকজনের দখলে ছিল। এই জমি নিয়ে জোলার পাড়ার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আমির হোসেন ও দিয়ার চরের বাসিন্দা এনামুল হকের সঙ্গে নাছিরের বিরোধ ছিল। আমির হোসেন ও এনামুল হক—এ দুজন খলিল উল্লাহ চৌধুরীর অনুসারী ও সমর্থক বলে জানা গেছে।

আজ সকালে সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে নাছিরের লোকজন কাজ করতে গেলে জোলারপাড়া ও দিয়ার চর এলাকার ৩৫–৪০ লোকজন এসে বাধা দেন। এ সময় প্রতিপক্ষের কয়েকজন নাছিরের পক্ষের একজন কৃষককে মারধর করেন।

আমির হোসেন ও এনামুল হক আমার অনুসারী সেটা ঠিক। কিন্তু নাছিরকে হত্যার ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনি নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক।

খলিল উল্লাহ চৌধুরী, চেয়ারম্যান প্রার্থী

এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বেলা ১টার দিকে নাছির ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় নাছিরের হাতে মাইক ছিল। তিনি মাইক দিয়ে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। এ সময় সেখানে এনামুল হকও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন গুলি ছুড়লে নাছিরসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর নাছিরের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন আজিজুল হক (৫০), মিজানুর রহমান (৩১), সারোয়ার হোসেন (৪২), আবুল কালাম (২১), নুরুল আমিন (৩৫), মো. শফি (৩৮), নুরুল কাদের (৪৫), জাফর আলম (৫০) ও জাহেদুল ইসলাম (২৪)। আহত ব্যক্তিদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতরা সবাই নাছিরের অনুসারী বলে জানা গেছে।

নাছিরের চাচাশ্বশুর আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জামাতাকে হত্যার পেছনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিল উল্লাহ চৌধুরীর ইন্ধন আছে।

অভিযোগের বিষয়ে খলিল উল্লাহ চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত ২০ দিন ধরে ঢাকায় আছি। আমির হোসেন ও এনামুল হক আমার অনুসারী সেটা ঠিক। কিন্তু নাছিরকে হত্যার ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনি নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মুহাম্মদ যুবায়ের জমির বিরোধে নাছির উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নাছির উদ্দিন নোবেলের বুক থেকে মাথা পর্যন্ত অনেক ছররা গুলি লেগেছে। এ ঘটনায় আরও নয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। এদিকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে বিকেল ৪টায় নাছিরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Source: Prothomalo