দুধকুমার নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুরে দুধকুমার নদে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বানিয়াপাড়া নামের একটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন শুরু হয়েছে চর যাত্রাপুরের ফকিরপাড়া গ্রামে। গত এক সপ্তাহে এই গ্রামের ১০টি পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি ভেঙে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে চর যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মসজিদ, এনজিওর একটি স্কুল, তাঁত কারখানা ও অনেক ফসলি জমি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের খামার রসুলপুর ঘাট এলাকার ফজলু, ফজলসহ অন্তত ১০ জনের বাড়ির অর্ধেক ভেঙে গেছে। পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে এখানে প্রায় ২০টি পরিবারের বসতভিটাসহ কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি দুধকুমার নদের গর্ভে চলে গেছে।

আজ বুধবার সকালে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুধকুমার নদের স্রোত তীব্র বেগে এসে পাড়ে আঘাত করছে। এতে বড় বড় মাটির স্তূপ ভেঙে পড়ছে। নদের তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে ভাঙনের আতঙ্ক লক্ষ করা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, গ্রামে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। পেশায় দিনমজুর ও মৎস্যজীবী। অনেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রিকশা চালান। কৃষিকাজ করে ও নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন কেউ কেউ। দুধকুমার নদের তীর ব্যাপক ভাঙছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে কেউ পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

চর যাত্রাপুর ফকিরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ হোসনে আরা বেগম। নদের ভাঙনের কারণে বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘নদী আগোত ম্যালা দূর আছিল। এ্যালা গ্রামোত আসি নাগছে। খালি ভাঙ্গে। উপায় না পায়া বাড়ির জিনিসপত্র নৌকায় তুলি নিয়া যাচ্ছি।’

পাশে আরেকটি নৌকায় ঘরের চাল তুলেছেন হোসনে আরার স্বামী বাবু মিয়া। তিনি বলেন, ‘দেখেন না বাড়ির অর্ধেক ভাঙ্গি গেইছে। জাগাজমি কিছুই নাই, উপায় না পায়া ওপারে চরোত নিয়া যাবার নাগছি। যদি কেউ জাগা দেয় ঘড় তুলি থাকমো।’

গৃহবধূ হোসনে আরা বেগম ঘরের জিনিসপত্র নৌকায় তুলে নিচ্ছেন। আজ বুধবার কুড়িগ্রামের চর যাত্রাপুরের ফকিরপাড়া গ্রামের দুধকুমার নদের তীর

গৃহবধূ হোসনে আরা বেগম ঘরের জিনিসপত্র নৌকায় তুলে নিচ্ছেন। আজ বুধবার কুড়িগ্রামের চর যাত্রাপুরের ফকিরপাড়া গ্রামের দুধকুমার নদের তীর

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, দুধকুমার নদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দিনহাটা মহকুমা হয়ে কুড়িগ্রামে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলকুরি ইউনিয়নের উত্তর ধলডাঙ্গা দিয়ে প্রবেশ করে ৬৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে দুধকুমার।

ভাঙনের মুখে পড়েছে ফকিরপাড়ার ফখরুল ইসলামের বাড়ি। বিশাল বাড়িটির তিন ভাগ এরই মধ্যে নদের পেটে চলে গেছে। নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে ফখরুলের স্ত্রী সাহিদা বেগম ভাঙনের তাণ্ডব দেখছিলেন, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘বিয়ার পর এই বাড়িত আসি উঠছি। কত যত্নে সাজাইছি। সউগ শ্যাষ হয়া গেইল।’

দুধকুমার নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাঁচ মাস আগে দুধকুমার নদ খননের জন্য চারটি ড্রেজার মেশিন নাগেশ্বরী নুন খাওয়া এলাকায় এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো কাজ করা হচ্ছে না। গতবারও এসব ড্রেজার মেশিন এনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, নদ খননের কাজ করা হয়নি।

একনেক বৈঠকে ১০ আগস্ট দুধকুমার নদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬৯২ কোটি ৬৮ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার অর্থছাড় পেতে এখন সময়ের ব্যাপার।

কুড়িগ্রামের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী

বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে বাসিন্দারা। আজ বুধবার কুড়িগ্রামের চর যাত্রাপুরের ফকিরপাড়া গ্রামে

বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে বাসিন্দারা। আজ বুধবার কুড়িগ্রামের চর যাত্রাপুরের ফকিরপাড়া গ্রামে

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, যে হারে ভাঙছে, এতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যাত্রাপুর হাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে। বিষয়টি পাউবোকে জানানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, একনেক বৈঠকে ১০ আগস্ট দুধকুমার নদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬৯২ কোটি ৬৮ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার অর্থছাড় পেতে এখন সময়ের ব্যাপার। তবে এই মুহূর্তে জরুরি কাজের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।

Source: Prothomalo