তারাকান্দার মনপবনের গাছ

গোড়ায় বিস্তৃত শেকড়ই যেন বলে দেয়, গাছটির বয়স অনেক বেশি। ওপরে বিস্তৃত সবুজ আর সতেজ পাতা বলে দেয়, গাছটির ছায়া কতটা শীতল। গাছটি গ্রামের মানুষদের আগলে রেখেছে বন্ধু হয়ে।

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বাতিয়া গ্রামে তারাকান্দা-ধোবাউড়া সড়কের পাশে প্রবীণ এ গাছের অবস্থান। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, গাছটির বয়স আনুমানিক ৩০০ বছর। গ্রামের মানুষ গাছটির নাম জানেন না। তাঁদের কাছে এটি অচিন বৃক্ষ। একটা সময় মানুষ নিজেদের চাওয়া পূরণের জন্য গাছটির কাছে মানত করে শিরনি দিতেন। নিজেদের চাওয়া-পাওয়া যেন বয়সী এ গাছের ওপর নির্ভর করত। যে কারণে গ্রামের মানুষ নাম না জানা গাছটির নাম দেন ‘মনপবনের গাছ’।

দিনে দিনে মানুষ কুসংস্কার থেকে সরে এসেছেন। এখন আর কেউ শিরনি দেন না। শুধুই উপকারী এক ‘বন্ধু’ হিসেবেই ভাবেন গাছটিকে।

সম্প্রতি তারাকান্দার বাতিয়া গ্রামে গিয়ে গাছটির বিষয়ে কথা হয় নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে। কথা বলে জানা যায়, গাছটির সঠিক বয়স ও জন্মকথা কেউ জানেন না। গাছটির জন্ম নিয়ে রয়েছে কিংবদন্তি। তা হলো বহু বছর আগে একদিন সকালে হঠাৎ গ্রামের রাস্তার পাশে দেখা যায় বিশাল আকৃতির এই গাছ। বিস্মিত গ্রামের মানুষেরা কত কিছুই না ভাবেন। কিন্তু রাতারাতি এত বড় গাছের জন্ম কীভাবে হলো, সে বিষয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেন না কেউ। পরে প্রচার হয়, ভারতের কামরূপ-কামাক্ষায় সে রাতে তুমুল ঝড় হয়েছিল। সেই ঝড়ে সেখান থেকে গাছটি উপড়ে গিয়ে ঘূর্ণি বাতাসের তোড়ে চলে এসে শেকড় গাড়ে এখানে। তারাকান্দার অনুশীলন সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি কবি সরকার আজিজ বলেন, এসব সংস্কার বা কুসংস্কার কেউ কেউ বিশ্বাস করত। এখন আর করে না। গাছটি গ্রামের মানুষকে ছায়া দেয়, মনের আনন্দ দেয়, এটাই মূল কথা।

বাতিয়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমার বাবা ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও বলতে পারেননি গাছটির জন্মকথা। বাবাও আমার মতোই বলতেন, তাঁর বাবাও নাকি ছোটবেলা থেকেই গাছটিকে এমনই দেখেছেন। আমাদের অনুমান গাছটির বয়স এখন ৩০০ বছরের কাছাকাছি হবে।’ ইয়াকুব আলী স্মৃতি হাতড়ে বলেন, মাঝে মাঝে দূরদূরান্ত থেকে কবিরাজেরা এসে গাছের পাতা নিয়ে যান ওষুধ তৈরির কথা বলে।

গাছটির গোড়া থেকে অসংখ্য শেকড় গজিয়ে অন্তত ৭ শতক জমি নিয়ে ছড়িয়ে আছে। ওপরের ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৮০ শতক জায়গাজুড়ে। সেই ছায়ায় গড়ে উঠেছে বাতিয়া গ্রামের ঈদগাহ। গরমের দিনে মানুষ এ গাছের ছায়ায় বসে শরীর জুড়িয়ে নেয়।

গ্রামের লোকজন জানান, প্রতিবছর শীতে গাছটির পাতা ঝরে। ছোট ছোট সবুজ ফল ধরে। পাতা ঝরার সময় ফলও ঝরে যায়। ফল খেতে গাছে পাখি এলেও কখনোই এ গাছে পাখিরা বাসা বাঁধে না।

ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান চয়ন কুমার ভদ্র গাছটি সম্পর্কে জানেন। তিনি বলেন, এটি একধরনের বট। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ফাইকাস মাইক্রোকার্পা। এ গাছ ৫০০ থেকে ৬০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ভারত ও চীনে এ ধরনের বট রয়েছে। কেবল কাটিংয়ের মাধ্যমে এ গাছের বংশবিস্তার হয়। পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে এ গাছের বংশবিস্তার হয় না। বাংলাদেশে এ ধরনের গাছের সংখ্যা কম। ছায়াবৃক্ষ হিসেবে সড়কের পাশে এ গাছ লাগানো যেতে পারে।

Source: Prothomalo