পন্টুনে গ্যাং সিঁড়ি স্থাপন না করায় বিপাকে যাত্রীরা

ঝালকাঠিতে নবনির্মিত লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে গ্যাং সিঁড়ি স্থাপন না করায় ঢাকাগামী যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ নিয়ে পণ্য পরিবহন করছেন ঘাটশ্রমিকেরা। পন্টুনের কাজ ৯০ ভাগ শেষ করেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাং সিঁড়ি স্থাপন না করে পাঁচ মাস ধরে ফেলে রেখেছে। এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

গ্যাং সিঁড়ির কাজ অসমাপ্ত থাকায় ঢাকা-ঝালকাঠি নৌরুটে চলাচল করা দুটি লঞ্চের কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে পাশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্টিমার কোম্পানির পন্টুনে। কিন্তু সেখানে স্টিমার ভিড়ানো থাকলে লঞ্চচালকেরা বাধ্য হয়ে নবনির্মিত লঞ্চ টার্মিনালেই যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। আবার লঞ্চ থেকে ব্যবসায়ীদের মালামাল নতুন টার্মিনালে নামানো হচ্ছে। এ কারণে যাত্রী ও শ্রমিকেরা ঝুঁকি নিয়ে অসমাপ্ত গ্যাং সিঁড়ি পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।

এদিকে কখনো নবনির্মিত পন্টুন, আবার স্টিমার কোম্পানির পন্টুনে লঞ্চ ভিড়াতে গিয়ে চালকদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, এতে অতিরিক্ত তেল খরচ হচ্ছে। তাই গ্যাং সিঁড়ি স্থাপন না করা পর্যন্ত যেকোনো সময় এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে পারে বলে জানিয়েছে দুটি লঞ্চের মালিকপক্ষ। ঝালকাঠি থেকে এক দিন পরপর সুন্দরবন-১২ ও ফারহান-৭ নামের দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ ২০১৯ সালে বিভিন্ন নদীবন্দরে স্থাপনের জন্য প্রায় ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ৪৫টি বিশেষ ধরনের টার্মিনাল পন্টুন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রতিটি পন্টুন নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। ওই বছরের ২২ আগস্ট আনন্দ শিপইয়ার্ড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। প্রতিটি পন্টুনের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট, প্রস্থ ৩২ ফুট এবং গভীরতা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ফুট। নির্মাণকাজের ৯০ ভাগ শেষ করে গত মার্চ থেকে গ্যাং সিঁড়ি নির্মাণ না করেই ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গত শুক্রবার সকালে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফারহান-৭ লঞ্চের কিছু যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়েছে স্টিমার কোম্পানির পন্টুনে। এর মধ্যে স্টিমার চলে আসায় লঞ্চ ঘুরিয়ে নির্মাণাধীন পন্টুনে এসে বাকি যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীরা মালামালসহ ঝুঁকি নিয়ে অসমাপ্ত গ্যাং সিঁড়ির পার হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক লঞ্চযাত্রী বলেন, ‘গ্যাং সিঁড়ির কাজ ফেলে রাখায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে পন্টুন পার হতে হচ্ছে। পা পিছলে গেলেই সুগন্ধা নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয় আছে।’

ফাহান-৭ লঞ্চের টিকিট মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘গ্যাং সিঁড়ি না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। কিছুদিন আগে একজন যাত্রী সিঁড়ি পার হতে গিয়ে পড়ে যায়। এ ছাড়া নবনির্মিত পন্টুন, আবার স্টিমার কোম্পানির পন্টুনে লঞ্চ ভিড়াতে গিয়ে চালকদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত তেল খরচ হচ্ছে। গ্যাং সিঁড়ি চালু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লঞ্চ বন্ধ রাখতে হতে পারে।’

লঞ্চঘাটের ইজারাদার আনোয়ার হোসেন গাজী বলেন, ‘করোনার মধ্যে ৩২ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে লোকসানে আছি। গ্যাং সিঁড়ির অভাবে যাত্রী কমে যাওয়া আরও লোকসানে পড়তে হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঝালকাঠি পন্টুনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাজিদ স্বপন বলেন, গ্যাং সিঁড়ি নির্মাণের জন্য চেক প্লেটের দরকার হয়। করোনায় দেশে চেক প্লেটের সংকট থাকায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। মালামাল হাতে পেলেই দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আজগর আলী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রকৌশলীরাও পন্টুন পরিদর্শন করেছে। আশা করি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।’

Source: Prothomalo