পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র থেকে যুবলীগ নেতার অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহৌৎসব

মোঃ মুঞ্জুরুল হক মুঞ্জু

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মুনিয়ারীকান্দা ঘাট এলাকায় ড্রেজার দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহৌৎসব চলছে। এতে রাষ্ট্র হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। পাশাপাশি নদের তীর ও তীর সংলগ্ন শতশত বিঘা ফসলী জমি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে সর্বশান্ত হচ্ছে শতশত কৃষক ও কৃষানী।

 

কোন ইজারা না থাকায় রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেদারছে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

তাদের এ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী। এরপরেও কোন অদৃশ্য ইন্ধনে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করছে ওই এলাকার প্রভাবশালী বিল্লাল হোসেন নামের একজন যুবলীগকর্মীর নেতৃত্বে ১০-১২জনের একটি চক্র।

 

এনিয়ে রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মুনিয়ারীকান্দা ঘাট এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের ওই অংশকে সরকারী ভাবে বালু মহালের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। এরপরেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। ওই নদের ওপর কোন সেতু না থাকায় ১০-১৫টি ড্রেজার বসিয়ে খেয়াল খুশিমত অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। এসব বালু শতাধিক বাল্বহেড বুঝাই করে উপজেলার বাহাদিয়া পাঠানবাড়ি ঘাট এলাকায় বিশাল স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় মুনিয়ারীকান্দা এলাকার নদের পাড় ভেঙে দুই শতাধিক কৃষকের দুই শতাধিক বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েগেছে। ফলে নদের পাড়ের জনবসতি এলাকাটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

 

ওই এলাকার বাবুল, কাজল, কাঞ্চন, বাচ্চু, সাদির ও রিয়াজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, এই এলাকার প্রভাবশালী বিল্লাল হোসেন নামের সরকারী দলের এক নেতা দীর্ঘদিন ধরে ওই নদের মাঝখানে ১০-১৫টি ড্রেজার বসিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ বাল্বহেড বালু বুঝাই করে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে নদের দুই পাড় আরও ভেঙে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনিতেই দুই শতাধিক বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় ওরা আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

 

অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, তোমরা আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় যা পার-তাই লেখ। এতে আমার কিছুই যায় আসে না।

 

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওই এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদ জুয়েল বলেন, আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে, ওই এলাকার নদের পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো একটি গ্রাম।

 

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় সময়ই বাল্বহেড জব্দ করাসহ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এরপরও আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করব।

 

কিশোরগঞ্জ-ভৈরব অঞ্চলের নৌ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যারের সাথে আলাপ হয়েছে। অচিরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ