ডাউকিয়া উত্তরপাড়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে আর.এস. লিবার্টি স্কুল

ফয়েজ আহমেদ মামুন: কিশোরগঞ্জ  জেলা সদর উপজেলায় গ্রামীণ জনপদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন সকলের কাছেই সুপরিচিত। কিশোরগঞ্জ সদরের ২নং লতিবাবাদ  ইউনিয়নের ডাউকিয়া উত্তরপাড়া  গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। কিশোরগঞ্জ  শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ  সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে আর.এস. লিবার্টি  স্কুল।

প্রতিবছরই ভালো ফলাফলে এলাকা  জুড়ে সুনাম আর সুখ্যাতি। বিদ্যালয়টিতে যেতে চোখে পড়ে গ্রামীণ আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, মাঠের পর মাঠ, বাক্স বিল, সড়কের দুই পাশে ধান ক্ষেত আর সবুজের সমারহ  ও সড়কের দু’পাশই ছায়াবৃক্ষের রাজত্ব।

লতিবাবাদ  ইউনিয়নের চারিদিকে মাঠ বেষ্টিত কৃষক আর শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিদিনই জীবন যুদ্ধে লড়ে। শ্রমিকেরা ইটের ভাটায় আর কৃষকরা মাঠে মাটির সঙ্গে লড়ে সোনা ফলায়। তাদের  শ্রমে-ঘামে চলে জীবন সংসার। এক সময়ে অভাব-অনটন আর টানাপোড়া ছিল তাদের প্রতিদিনের জীবনসঙ্গী কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে তাদের আশপাশ। পরিবর্তন আসছে সর্বত্রই। কৃষি ও শ্রমজীবী গ্রামীণ ওই জনপদের মানুষগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর জীবন- জীবিকা নিয়ে ভাবে। এই ভাবনার শেষ নেই। বর্তমান সময়ে সব কিছুতে একটি পরিবর্তন এসেছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা যেন পিছিয়ে নেই। তাই তারা তাদের সন্তানদের দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বর্তমান সময়ের সাথে তারা পড়ালেখায় উচ্চ শিক্ষা না নিলেও সন্তানদের এমন প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো করে বুঝেন।

আর সেই কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষদের চিন্তার অবসান ঘটাতে আগ্রহী হন ওই এলাকারই সু-সন্তান বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষানুরাগী কাউসার আহমেদ রাজিব স্যার । তিনি নিজ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে। এলাকার অসহায় সুবিধা বঞ্চিত সন্তানদের  শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে উদ্যোগী হন। ২০১৯ সালে তার পিতা মো. আব্দুল হান্নানের নামে নিজ অর্থায়নে ৫৪ শতাংশ  জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন আর.এস লিবার্টি স্কুল।  যে বিদ্যালয়টিতে এখন ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১০ জন রয়েছেন শিক্ষক- শিক্ষিকা  ।

এই এলাকাই  নেই সুশিক্ষা অর্জনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা আছে তা শহরে কিন্তু শহরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত আর পড়ালেখার খরচ কুলিয়ে সকলের গন্তব্যে পৌঁছানোর সাধ্য কোথায়? সারা দিন মাঠে-ঘাটে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা যাদের নেই ! তাদের সন্তান শহরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তা যেন দুঃস্বপ্ন। তাই নিজ এলাকায় সুশিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০১৯ সালে ৫৪ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন ২য় তলা ভবনের আর.এস লিবার্টি স্কুল। স্কুলটির প্রবেশ পথে দুই পাশে ফুলের বাগান। মূল গেটের পাশে ভিন্ন বিদেশি প্রজাতির ফলের গাছ। মনমুগ্ধকর পরিবেশে গড়ে ওঠা স্কুলটি এখন লতিবাবাদ ইউনিয়নের  অন্যতম স্কুল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্কুলটির পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৫ জন। সকল শ্রেণীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৫০ জন। ১০ জন শিক্ষক –শিক্ষিকাদের  তদারকিতে পরীক্ষায় পাশের হারে অত্র এলাকায়  বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।

তাদের এখন শতভাগ শতাংশের ফলাফলে অভিভূত এই লতিবাবাদ  ইউনিয়নে অভিভাবক ও সচেতন সমাজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুলটি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে চলছে। শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ালেখার সু-ব্যবস্থা, রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী। যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের স্কুল রাখা  হয়েছে নিজস্ব ভেন গাড়ী । শিক্ষার্থীদের ফ্রি চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক নানা সুযোগ-সুবিধা। সু-প্রশস্ত কম্পিউটার ল্যাব, পরিচ্ছন্ন ক্লাসরুম আর খেলাধুলার সু-ব্যবস্থা। নির্মল পরিবেশে চমৎকার ক্যাম্পাস শুরু থেকেই দৃষ্টি কাড়ছে সকলের। এখন স্কুলটি ওই এলাকার অন্ধকার দূর করে আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। এখন দিন যত যাচ্ছে স্কুলটি তার শিক্ষার আলো ততই ছড়াচ্ছে।

স্কুলটিরপরিচালক কাউসার আহমেদ রাজিব স্যার  বলেন, দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্কুলটিকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। নিজস্ব অর্থায়নে এত বিশাল ব্যয় বহন করেছি , অসচ্ছল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা থাকা সত্বেও শুধু সঠিক দিক নির্দেশনা গন্তবে পৌছাতে পারেনা ।গ্রামে একাদিক প্রতিষ্ঠান থাকা সত্বেও মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুব অভাব সেই চিন্তা চেতনা থেকেই সেই ক্ষুদ্র আয়োজন ।আসলেই সত্যিকার করে বলতে গেলে সফলতার কোন মাপকাঠি নেই । আমার ব্যক্তি গত উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৯ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে এই দিক থেকে বিবেচনা করে আমার এই ক্ষুদ্র প্রথেষ্টা অনেকেই সফল  রাজিব স্যার আরও জানান, আমি মনে করি ডাক্তার ইন্জিনিয়ার হওয়া সহজ ! কিন্তু ভাল মানুষ হওয়া কঠিন । তাই আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখি প্রতিটি শিক্ষার্থীই আর.এস,লিবার্টি প্রাঙ্গন থেকে নিজেকে গড়ে তুলবে এবং দেশ ও জাতির কল্যানে নিজেকে নিয়জিত রাখবে

শিক্ষা অনুরাগী কাউচার আহমেদ রাজিব  তাঁর  নিজ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে। শুধু এই স্কুল নয়, নিজ এলাকাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে তিনি  প্রতিষ্ঠা করেছেন আরো একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর মধ্যে ইংলিশ লানিং হুম, আর.এস স্পোকেন ইংলিশ একাডেমি , ফ্রি বই পড়ার জন্য অক্সর্ফোড লাইব্রেরি । সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে এখানে অধ্যয়ন করে উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছেন। স্কুলটি এগিয়ে নিতে তিনি শিক্ষাবান্ধব এ সরকারসহ সকলের সহযোগিতা চান। স্কুল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের সরকারের কাছে জোর দাবি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য  স্কুলটি কে আরও এগিয়ে নেওয়ার ।

 

 

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ