বাজিতপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে দোকান দখলের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা সদরের মাছমহল বাজারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি দোকানের ভাড়াটিয়া ও কর্মচারীদের মারধর করে দখলসহ লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বাজিতপুর বাজারের মাছমহালে তাদের ডিমের আড়তে হামলা চালিয়ে মারধর করে দোকান ভাঙচুরসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। মামলায় তিনজনের নামউল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বাদী বাজিতপুর উপজেলার তাতালচর গ্রামের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি দখল ও লুটপাটের ঘটনায় বাজিতপুর থানায় একটি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি। বরং প্রকৃত মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশসহ বিভিন্ন ধরণের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৮৫ ও ৯০ সালে দুই দফায় একই এলাকার শহরবানুর কাছ থেকে তিন শতাংশ জায়গাটি ক্রয় করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই স্থানে বিক্রেতার আর কোন জায়গা না থাকার পরও গোপনে উপজেলার মাদারহাটি এলাকার মো. গোলাম বাকীরের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপর থেকে ওই জায়গা দখলে নেয়ার জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরণের অপতৎপড়তা শুরু করে।
অবস্থার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী শেখ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বাজিতপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করলে শুনানী শেষে গত ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ আব্দুল্লাহ খান প্রতিপক্ষরা যেন ওই জমি দখল ও বর্তমান মালিকের ভোগ-দখলে কোন প্রকার বাধা-বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে এই মর্মে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই গত ১৮ জানুয়ারি বাদীপক্ষের ভাড়াটিয়াকে মারপিট ও লুটপাট করে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে দোকানটি তাদের দখলে নিয়ে নেয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিবাদীরা ওই দোকানে অন্য আরেক ব্যবসায়ীকে দোকানটি ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।
উচ্ছেদ হওয়া ভাড়াটিয়া হাকিম মিয়া জানান, আমি ওই দোকানে ডিমের ব্যবসা করতাম। গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ১০/১৫ জন লোক এসে জোর পূর্বক আমাকে বের করে দিয়ে মারধর করে সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে ঘরের মালামাল বের করে দোকান দখলে নিয়ে যায়।
পাশের দোকান ‘চৌধুরী চিকেন হাউস’ এর ভাড়াটিয়া আপেল মাহমুদ চৌধুরী জানান, ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় একদল লোক এসে মারধর করে মালামাল বের করে আগের ভাড়াটেকে তাড়িয়ে দিয়ে ওই দোকান দখলে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিপক্ষ মো. গোলাম বাকীরের ছেলে গোলাম আব্দুল্লাহ শান বলেন, শেখ সাইফুল ইসলাম ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে যেন আমরা আমাদের দোকান ছেড়ে দেই এবং উনারা দখলে নিতে পারে। উনি মুলত এখানে একটি মার্কেট তৈরীর জন্য আমাদের দোকানের জায়গাটুকু দখলে নিতে চাইছেন। তবে বিরোধপূর্ণ জায়গাটি নিয়েও একটি ভুল আছে। রেকর্ডে দলিলের চেয়ে আমাদেরও কম আছে, উনাদেরও কম আছে, এই হচ্ছে সমস্যা।
বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিষয়টি আপোষ মিমাংসা করার জন্য দু’পক্ষের সাথে কথাবার্তা হচ্ছে। উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই করে সালিশ-দরবারের মাধ্যমে বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ফয়সালা করে দেয়ার চেষ্টা করছি।
বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরাদ হোসেন জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরেও জমি দখলের চেষ্টার ঘটনায় শেখ সাইফুল ইসলামের অভিযোগ আমরা মামলা আকারে নিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।