সুন্দরগঞ্জে তিস্তার চরাঞ্চলে ভুট্টা বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

একেএম শামছুল হক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে এবছর ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়েছে। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নই নদী বিধ্বস্ত। এই ৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে লোকজন তাদের জমা-জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলের চাষাবাদ করেছেন। আবাদের লক্ষণ মোটামুটি ভাল। রবি ফসলকে ঘিরে নদী গর্ভে নি:স্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছরে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৬৯৫ হেক্টর। সরিষা ৪৩০ হেক্টর, মরিচ ১৭৫, রসুন ৭৫, আলু ৭৬৫, ধনিয়া ২৫, তিল ১৫, তিসি ১৫, ভুট্টা ১ হাজার ৪৫০, মিষ্টি আলু ৬০, পিঁয়াজ ২৬০, চিনা ২০, কাউন ৩০, চিনা বাদাম ৭৫, কালোজিরা ১০, আখ ৭, শাক-সবজি ৫৩৫, মাসকালাই ১২৫ হেক্টর, তামাক ৬০, কলা ৬০, বাকলা ডাল ৭, অড়হর ৪, খেসারী ৫০, মসুর ৪৫, মুখ ২০ হেক্টর। তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদী জমি, বসতবাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়। এই নিঃস্ব পরিবার গুলো বাঁচার তাগিদে তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ত্যাগ করে রিক্সা, ভ্যান চালাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রম বিক্রি করছিল। কিন্তু নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠে ছোট ছোট অসংখ্য বালু চর। এই চরে রবি ফসল চাষ করা যায় নির্ভয়ে। ফলনও হয় খুব ভাল। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপক চাষাবাদে মাঠে নেমেছে কোমড় বেঁধে। নদীর ধু-ধু বালু চরে যেখানে যে ফসল প্রযোজ্য তাই চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। আবাদের ফলন খুব ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার কৃষককে পূণর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে এক বিঘা জমি চাষের বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ভুট্টার বীজ ও সার ৯০০ জনকে, গম ১ হাজার ৫০০, মাস কালাই ৫০০, মুগ ১০০ জনকে দেয়া হয়েছে। গত বন্যায় আমন ক্ষেতের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় যে সমস্ত জমি পতিত পড়েছিল সে গুলোতে আগাম করে রবি ফসল চাষ করেছে কৃষকরা। তাদের আসা আমনের লোকসান যেন রবিতে উঠে আসে। বিশেষ করে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে ভুট্টা চাষের উপর। কারণ ভুট্টা চাষে অধিক লাভ হয়। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার আবাদ হয়েছে বেশি। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মণ করে ভুট্টার ফলন হয়। খোর্দ্দা চর গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ জানান, এবছর দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায় এবং লাভজনক ফসল হওয়ায় ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছি। ভুট্টার পর একই জমিতে সঠিক সময়ে তোষা পাট লাগানো যায়। কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আবাদতো খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক সময় আমাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। এখন যতই হাসি খুঁশি থাকি না কেন বৈশাখী ঝড় যদি বয়ে যায় তাহলে ভুট্টা ক্ষেত ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়। তখন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো অবস্থায় পড়ি। কৃষক আয়নাল হক জানান, কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ পেলে আমরা আরও উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতাম। তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝে কৃষক প্রশিক্ষণের কথা শুনি কিন্তু কখনো প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। তিনি আরও জানান কৃষকের আশা-ভরসার শেষ সম্বল এ চর যেন আর ভাসিয়ে না নেয় সর্বনাশা তিস্তা নদী। এদিকে চরের পাশাপাশি উচু এলাকা ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নেও অস্বাভাবিক ভুট্টার ফলন দেখা দিয়েছে। এর এলাকার কৃষক আলম মিয়া, শামছুল হক, ইউসুফ জামান, ইসমাইল হোসেন জানান, বোরো চাষের তুলনায় খরচ অত্যন্ত কম ও রোগ বালাই সহনশীল ভুট্টা চাষ বতর্মানে অধিক লাভজনক ফসল তাই আমরা এবারে ভুট্টা চাষের আগ্রহ দেখিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, রবি ফসলের ৭০ ভাগই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়। কৃষকের হাতে উপযুক্ত সময়ে কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ দেয়ার কারণে লাভজনক আবাদ ভুট্টার চাষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

 

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ