ক্রীড়া নৈপূণ্যে উদ্ভাসিত আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়


আশরাফুল ইসলাম, প্রধান সম্পাদক,

কটির আয়তন হবে আনুমানিক ২৪ ফুট বাই ১৮ ফুট। সেই করে পাঁচটি বড় বড় শেলফে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানান ডিজাউনের ট্রফি আর ক্রেস্ট। ট্রফি-ক্রেস্টের পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের শিল্ড। বাহারি ট্রফি আর ক্রেস্টে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে কটির একমাত্র টেবিলটিও।প্রথম দেখায় মনে হবে, এখানে ট্রফি, ক্রেস্ট, শিল্ড বা এ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের প্রদর্শনী চলছে বা প্রদর্শনীর জন্য কটিকে সাজানো হয়েছে। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কটি কিশোরগঞ্জ শহরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিকের। আর এতো এতো ট্রফি, ক্রেস্ট ও শিল্ড সবগুলোই বিদ্যালয়ের শিার্থীদের ক্রীড়াকৃতিত্বের স্মারক।বিদ্যালয়টির নাম আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়। শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকায় ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দানবীর ওয়ালীনেওয়াজ খান। বিদ্যালয়টি কোন বিশেষায়িত ক্রীড়া শিা প্রতিষ্ঠান না হলেও বিদ্যালয়ের শিার্থীদের জেলা, আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক সফলতা ও কৃতিত্বের জন্য এরই মাঝে প্রতিষ্ঠানটি ক্রীড়াবিদ তৈরির একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক মো. আব্দুল্লাহ জানালেন, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রায় নিয়মিতই বিদ্যালয়ের শিার্থীরা পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে। অফিসে শেলফের সংখ্যা বাড়ানোর পরও পুরস্কারগুলো রাখার জায়গা হচ্ছে না। এ কারণে শেলফগুলোর ভেতরের দিকেও ঠাসাঠাসি করে অনেক পুরস্কার রাখা হয়েছে। এমনকি প্রধান শিকের টেবিল এবং অফিস করে দেয়াল, আলমিরা এগুলোও বাদ যাচ্ছে না। নতুন শিার্থীদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিতে পুরস্কারগুলো এভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু যে অবস্থা তাতে পুরস্কারগুলো রাখার জন্য তাদের খুব শীঘ্রই আলাদা একটি করে ব্যবস্থা করতে হবে বলে তিনি মৃদু হেসে জানান। মো. আব্দুল্লাহ জানান, ১৯৯০ সাল থেকে গত ২৯ বছরে ক্রীড়ােেত্র এই বিদ্যালয়ের প্রতিযোগীরা জেলা, আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছে। শত শত ক্রীড়াবিদ ও খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে।

তিনি জানান, ১৯৯৭ সালে চট্টগামে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতির জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ঝুমা রানী সরকার বাংলাদেশের দ্রুততম বালিকা ও ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।২০০৪ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতির জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শরীফুল ইসলাম রনি বাংলাদেশের দ্রুততম বালক ও ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

২০০৬ সালে যশোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিনা আক্তার ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।২০০৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মেয়েদের হ্যান্ডবলে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০০৯ সালে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় লিটন মিয়া তিনটি ইভেন্টে বাংলাদেশের দ্রুততম বালক ও ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

২০১০ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতির অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় মেহেদী হাসান রানার্স আপ হয়। ২০১২ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় আছমা হক ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন এবং ছেলেদের হকিতে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলেরা জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। ২০১৪ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত ছেলেদের হকিতে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলেরা জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। ২০১৬ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বাস্কেটবল এবং হকিতে আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।২০১৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাস্কেটবল এবং হকিতে আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মেয়েদের হ্যান্ডবলে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় যুব গেমসে ঢাকা বিভাগের পে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন এবং হকিতে রানার্স আপ হয়।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সালে আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে বিপিএড শিক হিসেবে যোগদান করেন মো. আব্দুল্লাহ। এরপরই মূলত বিদ্যালয়টিতে ক্রীড়ােেত্র নতুন দিনের সূচনা হয়। শিার্থীদের প্রশিণ এবং ক্রীড়ায় আগ্রহী করে তুলতে তিনি অবিরাম ও নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর এই পরিশ্রমের ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলায় ধারাবাহিক নৈপূণ্য দেখিয়ে আসছে। এই স্কুলের শিার্থীরা ১০ বার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং ৯ বার জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ হয়েছে, যা এক অনন্য অর্জন।জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও ক্রীড়া সংগঠক সাইদুল হক শেখর বলেন, আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয় কিশোরগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই স্কুলের দায়িত্বে থাকা মো. আব্দুল্লাহ খেলাধুলার পেছনে প্রচুর পরিশ্রম ও সময় দেন। তাঁর হাত ধরেই বিদ্যালয়টি ক্রীড়ােেত্র জাতীয়ভাবে সাফল্য ও পরিচিতি পেয়েছে। এই অর্জন আমাদের সবাইকেই গর্বিত করেছে।

editor

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries