কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ভাস্করখিলা বিলে মাছ ধরা উৎসব
আমিনুল হক সাদী :
কিশোরগঞ্জের কয়েক শত বছরের পুরনো ভাস্করখিলা বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব। বিলের এ উৎসবে জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মৎস্য শিকারী অংশ নেন। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোর থেকেই পলোসহ বিভিন্ন ধরণের জাল দিয়ে শিকারীরা মাছ ধরতে বিলের পানিতে নেমে পড়েন। এসময় শিকারীদের হৈহুল্লায় মুখরিত হয় পুরো এলাকা। এবার মাছও ধরা পড়েছে অনেক। তাছাড়া মাছ ধরা যেমন-তেমন, এ উৎসবে যোগ দিয়ে আনন্দিত সবাই বলে জানিয়েছেন মৎস্য শিকারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, আবহমানকাল থেকে কিশোরগঞ্জের হাওর বাঁওর ও বিলের পানিতে মাছ ধরার উৎসব হয়ে আসছে। কালের আবর্তে সে মাছ ধরা উৎসব বিলুপ্তির পথে। কারণ জলাধারগুলো ইজারা নিয়ে প্রভাবশালীরা সেখানে মাছের চাষ করছেন। বিলে অপরিকল্পিত অধিক পরিমাণ ফিসারী ও নদ নদী বিলে বাধের কারনে মাছ ধরা উৎসব কমে আসছে। তবুও কিছু কিছু এলাকায় এখনো মাছ ধরা উৎসব চলমান আছে। এমনি এক মাছ ধরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা বিলে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই করিমগঞ্জ, তাড়াইল, নান্দাইল,কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে বুড়োসহ নানান বয়সী কয়েক হাজার মৎস্য শিকারী বিলের পানিতে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। পলো, টাকজাল, ঠেলা জাল, বান্ধর জাল, কুইচ, দড়িসহ নানান ধরণের মাছ ধরার জাল নিয়ে শিকারীরা মনের আনন্দে মাছ ধরেন। কেউ কম কেউ বেশী মাছ ধরলেও আনন্দ সবারই সমান। একজনের পলো কিংবা জালে একটি মাছ ধরলে সবাই সমস্বরে চিৎকারে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এ যেনো অন্য রকমের অনুভুতি বলে জানান মৎস্য শিকারীরা।
করিমগঞ্জের জংগলবাড়ির মৎস্য শিকারী রহিম উদ্দিন জানান, ‘আগের দিন গ্রামের হাটবাজারে মাছ ধরার বিষয়টি ঢাকঢোল ও দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়। মুহুর্তেই সে খবর মাছ শিকারীদের কানে পৌঁছে যায়। এরপর সবাই আমরা উৎসবের আমেজে মাছ ধরি। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে মাছ ধরা উৎসব চলে আসছে। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগে আরও সহজ হলেও রিং জাল দিয়ে মাছ মেরে ফেলায় এখন আর মাছ ধরা উৎসব হয়ে ওঠে না’।
কিশোরগঞ্জ সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাগ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, ‘নিজের পুকুরে মাছ মারা আর বিলের পানিতে একসাথে মাছ মারার মজাই আলাদা। এখানে হাজার হাজার লোক একসাথে মাছ ধরছি। আমি মাছ তেমন না ধরতে পারলেও অনেক মাছ শিকারীরা প্রচুর মাছ ধরেছে। নিজের হাতে মাছ ধরা এতে কি যে আনন্দ তা বলে বুঝানো যাবে না বলে তিনি জানান।’
যশোদল গোয়ালাপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ মিয়া জানান, গতকাল রাতে মহিনন্দের কলাপাড়ায় শশুরবাড়িতে অবস্থান করে আজ সাত সকালে শালা সুজনকে নিয়ে সবাই একসাথে মিলিত হয়ে মাছ ধরি। মাছ কম বা বেশী যাই পাই, এ উৎসবে শামিল হওয়ায় মন খুবই খুশী লাগছে বলে তিনি জানান।
মহিনন্দ ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, ভাস্করখিলা বিলে এক সময়ে প্রতি বছর মাছ ধরা উৎসব হতো। ১০/১৫ বছর যাবত সে উৎসব হয়নি। এবারে অতি বৃষ্টিতে আমার ফিসারীসহ এতদাঞ্চলের অনেক ফিসারীর মাছ পানিতে ভেসে গেছে। যেকারণে মানুষের মধ্যে মাছ ধরা উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক মাছ দিন দিন কমে আসছে। তাই সরকার বিভিন্ন বিলে ও পুকুরে পোনা মাছ ছেড়েছে। মাছ ধরা উৎসবে যাতে কোনো পোনা মাছ না ধরা হয় সে বিষয়ে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে পলো ও জাল দিয়ে মাছ ধরাকে পরিবেশ বান্ধব বলে তিনি জানান।