বগুড়ার মাদুর এখন বিশ্ববাজারে রপ্তানি হচ্ছে

মোঃ সজীব হাসান, আদমদীঘি :

বগুড়ার আদমদীঘির তৈরী মাদুরের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। এছাড়াও এটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। মাদুর ব্যবসার পাশাপাশি এটি লাভজনক হওয়ায় মাদুর তৈরীর পাতি (নল) এলাকার কৃষকরা এর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

আদমদীঘি মাদুর শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনের নিপুন হাতে তৈরী এই মাদুর এখন শুধু দেশে নয় বিশ্ব বাজারেও স্থান পেয়েছে। ফলে এর চাহিদা শুধু দেশে নয় বিদেশে ও ব্যাপক চহিদা রয়েছে। এই শিল্পের ওপর ভর করে এ এলাকার মানুষ দারিদ্রতাকে জয় করেছে। কোন রকম প্রচার প্রচারনা ও সরকারী-বেসরকারী সাহায্য ছাড়াই এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল এককর্মক্ষেত্র।

আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের ছাতনী ও ঢেকড়াগ্রামে প্রাচীন কাল থেকে এই দুই গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ এই মাদুর শিল্পের পেশায় নিয়োজিত। এছাড়াও এই এলাকায় কৃষকরা মাদুরের পাতি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই গ্রাম দুটিতে মাদুর শিল্পের বিকাশ দেখে পাশ্ববর্তি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার বোদলা কুজাইল কাশীমপুর কেল্লাপাড়া পাল্লা ত্রিমোহিনি সহ ও আশপাশ এলাকার শ্রমিকরা এ শিল্পকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে। কম খরচে অধিক উৎপাদন এবং যন্ত্রপাতির কোন দরকার হয়না তেমন কোন ঝুঁকি ঝামেলা ছাড়াই সহজে মাদুর উৎপাদন এবং তৈরি করা সম্ভব হয়।

ছাতনী গ্রামের মেরাজ হোসেন, দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকে জানিয়েছেন প্রাচীন আমল থেকে এ অঞ্চলে মাদুরের প্রচলন শুরু হয়। মাদুর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি তাকে বলা হয় পাতি। পাতি দুই প্রকার একটি বোন পাতি ও অপরটি চাষের পাতি। বনপাতি বা জংলি পাতি বলা হয়। এর চাষ এবং পরিচর্যা ছাড়াই ঝোপ জংঙ্গোলের মধ্যে বেড়ে উঠে। আর চাষের পাতি তৈরি হয় মুথা নামের এক ধরনের পাতির গোরা কেটে জমিতে পুতে রাখাহলে আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠে। এর বিজ রোপন করা লাগেনা। এর নীচের অংশ মোথা নিচু জমিতে হয় এবং জমির কাদার সঙ্গে এগুলি লেগে থাকে। কাদা থেকে তুলে ধুলে দেখা যাবে এক সংগে অনেকগুলো জমাট বেধে থাকে। সেই মোথাকে উঁচু বা নীচু জমিতে কাঁদা করে টুকরো টুকরো করে জমিতে পাতানো হয়। ৫-৭ দিন পর দেখা যায় ওই জমাট বাধা মোথা থেকে পাতি নামে এক ধরনের চারা জাগে এই চারা ২৫ দিন পর তুলে অল্প পানিতে ৪ ইঞ্চি পর পর লাগানো হয়। ৭০ থেকে ৮০ দিন পর চার থেকে সোয়া চার হাত যখন লম্বা হয় তখন এটিকে কেটে রোদে শুকানো হয়। এরপর সেই শুকানো পাতি থেকে দেশিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতে ও মেশিন দ্বারা মাদুর তৈরি করা হয়। একটি মাদুর তৈরি করতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে। যেটি হাতে বুননের জন্য মাত্র দুজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর মেশিনে তৈরি খুব অল্প সময় লাগে। মাদুর শিল্প অধিক লাভজনক এর মোথা একবার জমিতে পুঁতে রাখলে তিনবার কাটা যায়।

এছাড়াও এলাকায় গড়ে উঠা একাধিক মাদুরের কারখানায় চীন,ভারত পাকিস্তান শ্রীলংকা থেকে উন্নত মানের ম্যাটারেল এনে প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করা হচ্ছে। মাদুরের উচ্চতা ও মান অনুসারে বাজারে বিক্রি হয়। প্রতি দেড় হাত মাদুর বিক্রি হয় ৫০-৭০ টাকায় চার হাত মাদুর বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ছয় হাত মাদুর বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতি হাটবার ছাডাও প্রতিদিন ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে মাদুর কিনে বাস ও ট্রেনযোগে নিয়ে যায়। ফলে মাদুর ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর এ ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে । পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকরা এটি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

এই এলাকার মাদুর ভারত, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মিসর, ইরান, ইরাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সংসারের নানা কাজে ও জায়নামাজ হিসাবে মাদুর ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পের উপর ভর করে এই এলাকার মানুষ দারিদ্রতাকে জয় করেছে। সরকারি পর্যায়ে মাদুর শিল্পের উন্নয়নে ঋন ব্যবস্থা করা হলে এই শিল্পের ব্যাপক বিকাশের সম্ভাবনা আছে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।

editor

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries