তাড়াইল পদ্ম বিলে ছুটছেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা
সাব্বির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :
ফুলের রানি পদ্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা! এমনি সাহিত্যের পরতে পরতে মিলবে পদ্মের উপাখ্যান। বর্ষায় জন্ম তবে শরতেই পূর্ণতা পায় জলজ ফুলের রানী পদ্ম। গ্রাম বাংলার বিল ঝিলে প্রকৃতির সারদীয় স্নিগ্ধতা বাড়িয়ে দেয় বাহারী রং এর ফুল।
ফুটে থাকা ফুল শুধু বিল নয় সৌন্দয্য বাড়িয়ে তোলে প্রকৃতির। আর প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া ফুলের রানী পদ্ম সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে দিগন্তজুড়ে শোভা পাচ্ছে পদ্মফুলের গালিচা। পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলার পাশাপাশি রাজধানী থেকেও প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা।
আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলে আসেন পর্যটকরা। পদ্মফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। নৌকায় ঘুরে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। অনেকেই আবার এমন অপরূপ সৌন্দর্য ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে রাখছেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণপিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরের অদূরে ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো গ্রাম ঘোষপাড়া। এ গ্রাম সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কাইনহা বিলের অবস্থান। বর্ষা ও শরৎকালে এ বিলের বুকজুড়ে দেখা দেয় পদ্ম ফুলের সমারোহ। এ কারণে দশগ্রামের মানুষের কাছে বিলটি পদ্মবিল হিসেবেই পরিচিত।
পদ্মফুল সাধারণত বর্ষার শেষে এবং শরতের শুরুতে সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্ত থেকে ফুটতে শুরু করে। সারারাত ধরেই একে একে পাল্লা দিয়ে সৌরভ ছড়িয়ে ফুটতে থাকে পদ্মফুল। ইংরেজিতে পদ্মকে বলা হয় Lotus যার বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera.
গতকাল রবিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জলের উপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হাসছে লাল-সাদা একেকটি পদ্ম। দেখলে মনে হয় লাল-সাদা পদ্ম যেন রঙের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে পুরো বিল জুড়ে পদ্ম ফুলের সমারোহ। পদ্মফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। নৌকায় ঘুরে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন তারা। অনেকেই আবার এমন অপরূপ সৌন্দর্য ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে রাখছেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণপিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মিয়া জানান, এক সময় এই বিলে পদ্ম ফুলের গড় ছিল। প্রচুর পদ্মফুল ফুটতো। মাঝে তেমন চোখে পড়তো না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরো বিল জুড়ে আবারও প্রচুর পদ্মফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। কেবল পদ্মফুল-ই নয় ফুটছে মনোহর ‘সাদা শাপলা’ও।
বিলে ঘুরতে আসা মেরাজ নাছিম জানান, এই বিলে পদ্ম ফুলের সৌরভ মানুষকে বিমোহিত করে। এখানে এলে বাতাসেও ছুঁয়ে যায় ফুলের ঘ্রাণ। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্য অন্যরকম মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসছেন মামুন মিয়া তিনি বলেন, বিলের কথা মানুষের কাছে অনেক শুনেছি। তাই আজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিলে ঘুরতে আসছি। নৌকা দিয়ে বিল ঘুরে অনেক ভালো লাগছে।
স্ত্রী নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরতে আসা শরীফুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মবিলে এসেছি। এখানে পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখে মনটা ভরে গেছে।
ফারুক আহমেদ জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক বিলে পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে আসছেন। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল এদিকে শরৎকালে যেমন বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে তেমনি স্থানীয় কিছুসংখ্যক লোকজনের কাজ না থাকায় পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় বিলে ঘুরিয়ে লাভবান হচ্ছেন।
ডিঙ্গি নৌকার মাঝি খাইরুল ইসলাম বলেন, পদ্মফুল দেখতে প্রতি দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষ আসে। দিনে চার-পাঁচবার করে একেকজন মাঝি নৌকায় লোকজন নিয়ে বিলে যায়। নৌকায় বিল দেখিয়ে বেশ ভালো আয় হচ্ছে। নৌকা দিয়ে দিনভর লোক ঘোরাই আর রাতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরি।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আল-মামুন বলেন, পদ্মবিলকে ঘিরে পর্যটনের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।