কটিয়াদীতে সরকারি চাকুরিজীবির বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন অমাণ্য করে শতবর্ষী খাল ভরাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার করঁগাও ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন অমাণ্য করে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে শত বছরের পুরনো কটিয়ার খালটি দিনে দুপুরে ভরাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, শতবর্ষের খালটি ভরাটের কারণে শত-শত একর কৃষি জমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা অনাবাদি। সেই সাথে করগাঁও ইউনিয়নের ডাঙ্গেরগাঁওসহ ৩টি গ্রামের প্রায় ত্রিশহাজার মানুষের বৃষ্টি বাদলের কারণে থাকবে পানি বন্ধি। করগাঁও ইউনিয়ন সদর থেকে আরও কয়েকটি গ্রামেরও বৃষ্টি বাদলের পানিও নিস্কাসনের একমাত্র খাল এটা।

উক্ত খালটি ভরাটের প্রতিবাদে ১ মাস আগে থেকে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ১১ টায় ডাঙ্গেরগাঁও এর মাটি ভরাটকৃত খালের উপর লোকজন মানববন্ধন করে জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার না পেয়ে গ্রামের লোকজন এ মানববন্ধন করেছেন খালটি ভরাটের প্রতিবাদে। তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পাচলীপাড়ার রবিউল্লাহ (৬৮), মহর উদ্দীন (৭৫), ডাঙ্গের গাও এর সুরুজ আলী (৮৩), নূর হোসেন (৭৫), জহর আলী (৬২), আছির উদ্দীন (৬০), জালাল মিয়া (৫৯), গিয়াস উদ্দিন (৫৬), শাহজাহান (৫৬), রাছেল (৫৫), কাজল মিয়া(৫২), আল ইসলাম (২৭), কাউছার মিয়া(২৬) প্রমূখ।

সর্বশেষ গ্রামবাসীর পক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জে খাল ভরাটের অভিযোগ ও আইনী প্রতিকার চেয়ে জনৈক সুরুজ আলী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে ও লিখিত অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা আফরোজা আক্তারের সরাসরি উদ্যোগে পরিবেশ আইন অমান্য করে এ শতবর্ষী খালটি ভরাট চলছে। কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকা আফরোজা আক্তার স্বপ্না পুকুর ও খাল ক্রয় করে পিতা ও ভাইয়ের প্রভাব কাটিয়ে পরিবেশ আইন সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে বাধা নিষেধ অমান্য করে খালটি ভরাট করে যাচ্ছেন। অনুসন্ধান ও স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, করগাঁও স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি তহশিলদারকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করার ফলে সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে মাটি ভরাটের সুযোগ করে দিচ্ছেন।

ভুমি পরিবেশ আইন ও বিধি রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট মোকদ্দমায় সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল, নদী-নালা, রাস্তা ভরাট, বানিজ্যিক স্থান হিসেবে ইজারা প্রদান নিষেধাজ্ঞা র‌য়ে‌ছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা আফরোজা আক্তার বলেন, আমি আমার দলিলকৃত খালে মাটি ভরাট করছি এখানে আইনের কি আবার সাংবাদিকদের কি হয়েছে বলুন তো বলে ফোনটি কেটে দেন!

বিষয়টি নিয়ে খন্দকার নাজমুল আলম (আফরোজার ভাই) বলেন, বিষয়টি ইউএনও সাব মৌখিক ভরাটের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে তিনি ভরাটের পক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। এরপর তিনি বলেন, এছাড়াও সেনাবাহিনীর মেজর ও ব্রিগেডিয়ার আমাদের নিকট আত্নীয় রয়েছেন তারাও বিষয়টি জানেন।

এ বিষয়ে করগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন নাদিম মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, আমরা খালের জায়গাটি কার সে দরবার করেছি। ভরাটের কোন অনুমতি দেইনি। তাছাড়া ভরাটের অনুমতির ক্ষমতাও আমার নেই। তবে তিনি বলেন, খালটি ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতায় সকলকেই ভুগতে হবে। আমিও এর সঠিক আইনি প্রতিকার চাই।

এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঈদুল ইসলাম বলেন, খাল ভরাটের জন্য এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোন লিখিত আবেদন আসেনি। তাই কোন প্রকার মৌখিক অনুমোদন দেয়ার কোন প্রশ্নই নেই। এরপর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সিসি) ডা. হালিমা আখতার
বলেন, বিষয়টি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে অবহিত হয়েছি। পরিবেশ আইনের লঙ্ঘনের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব। সেই সঙ্গে বিষয়টি কেন্দ্র করে কোন প্রকার সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধও জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (পরিবার পরিকল্পনা) মুহাম্মদ নাজমুল আনোয়ার অপু বলেন, বিষয়টি যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ হয়েছে তাই আগে অভিযোগ প্রমাণিত হোক, তারপর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক শুভ্র চন্দ্র বিশ্বশর্মা জানান, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ