অনন্য মির্জা নাহিয়ান

নিউজ ডেস্ক
কানাডার টরন্টো স্কুল বোর্ড কর্তৃক বছরের সেরা শিক্ষার্থীদের একজন নির্বাচিত হয়েছে মির্জা নাহিয়ান। পুরো নাম মির্জা নাদিরা আঞ্জুম নাহিয়ান। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ কানাডীয় কিশোরী ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড (টিডিএসবি) কর্তৃক গ্রেড-১২ (উচ্চমাধ্যমিক) উত্তীর্ণ হওয়া সেরা সাত মেধাবীর মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। এখন কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সাড়ে চার বছর বয়সে কানাডায় এসেছিল নাহিয়ান। আজ টরন্টোর গ্রেড-১২ পাস করা ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সেরা সাতে জায়গা করে নিয়েছে সে। তার এ সাফল্যের পেছনে থাকা নিরলস প্রচেষ্টার গল্পটি প্রথম আলোকে শুনিয়েছে নাহিয়ান।

সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে বসেই আলাপচারিতার শুরু। অভিনন্দন পর্ব শেষে জানতে চাইলাম এমন সাফল্যের জন্য প্রস্তুতি ছিল কিনা? নাহিয়ানের সরাসরি উত্তর, ‘একদমই না। সেরা নির্বাচিত হব, ভাবনাতেও ছিল না। শুধু পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। ১০ জুলাই সকাল ১১টা নাগাদ টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের জনসংযোগ বিভাগ থেকে ফোন করেন মিস সেইরি। বাড়িতে তখন আমি একাই ছিলাম। কুশল বিনিময়ের পরই তিনি বললেন, “ইউ হ্যাভ এ গুড নিউজ…।” নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। টরন্টোর ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সেরা সাতে আমি আছি! বাসা থেকে সোজা দৌড়ে মায়ের অফিস। ফোনে বাবাকে জানাই। আকস্মিক এ প্রাপ্তিতে নিজের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। প্রেরণা পাচ্ছি সামনে আরও ভালো করার।’
স্থানীয় স্কারবরো সিডার ব্রেই কলেজিয়েট স্কুল থেকে গ্রেড-১২ সম্পন্ন করেছে মির্জা নাহিয়ান। ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্থান করে নিয়েছে সে শীর্ষ শিক্ষার্থীর তালিকায়। বুয়েট থেকে পাস করা যন্ত্র প্রকৌশলী মির্জা হোসেন সোহাগ ও শিক্ষক নাসরীন সুলতানা দম্পতির দুই সন্তান। বড় সন্তান ছেলে মির্জা রেদোয়ানুর রহমান টরন্টোর রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে মির্জা নাহিয়ান যাচ্ছেন বৃত্তি নিয়ে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে।
সাফল্যের পথে নিয়মিত পড়াশোনা করেছে নাহিয়ান। কখনো চাপ অনুভব করেনি। নাহিয়ানের ভাষায়, ‘আমি স্কুলের পড়াশোনায় খুব একটা চাপ অনুভব করিনি। কোনো কিছুই আগামীকাল করব ভেবে ফেলে রাখতাম না। শিক্ষকেরা বলতেন, “চেষ্টা করে যাও, নম্বর আপনা-আপনি তোমার পিছু ছুটবে।” আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি মাত্র। আজকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে আমার স্কুল আর পরিবারের অনন্য ভূমিকা। মা চেয়েছিলেন আমি যেন চিকিৎসক হই। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাটাছেঁড়া আমাকে ঘাবড়ে দেয়। মা-বাবাকে বুঝিয়েছি, কম্পিউটার সায়েন্স পড়েও নিজেকে মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে পারব। আমার পরিবার আমার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করেছে।’
স্কুল পাঠ্যক্রমের পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নম্বর পাওয়াই শুধু নয়, সেরার কাতারে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, বিজ্ঞান ক্লাবসহ নানাবিধ স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজেও সমানভাবে দক্ষতার পরিচয় রেখেছে। গত ১৯ জুলাই টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয় নির্বাচিত সেরা শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। অনুষ্ঠানে যোগ দেয় বিভিন্ন স্কুলের জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী। সে দিনের অনুষ্ঠানে নাহিয়ানসহ ইথান ম্যাকটাভিস, লওরিন টালবোট ও বাসিল মোন্টাগনিস বক্তব্য রাখে। সেরা চার শিক্ষার্থীর বক্তব্য বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের দিয়েছে সফল হওয়ার প্রেরণা। পরদিন কানাডার মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় নাহিয়ানদের সাফল্যগাথার খবর।
স্কুলের পাট চুকিয়ে সেপ্টেম্বরেই টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন নাহিয়ান মির্জা। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাহিয়ানের জন্য ১০ হাজার ডলারের ‘ডিন’স মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাহিয়ানকে টরন্টোর একজন ‘সেরা শিক্ষার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। শুধু তা-ই নয়, সম্মানজনক ‘শুলিচ লিডার স্কলারশিপ’-এর বাছাই পর্বেও মনোনয়ন পেয়েছে নাহিয়ান।
মির্জা নাহিয়ানের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সিডার ব্রেই স্কুলের উপাধ্যক্ষ জিয়েন্স পার্ক। তাঁর মতে, ‘মির্জা (নাহিয়ান) খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। সময়ের প্রতি ছিল তাঁর সঠিক নজর। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে সবার প্রিয় ছিল সে। স্টিম আর্ট শিরোনামে গ্রেড-৮ এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী দলের প্রধান হয়ে কাজ করেছে। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’
২০০৫ সালে নাহিয়ান বাবা-মায়ের সঙ্গে কানাডায় অভিবাসী হয়ে এসেছিল। তাদের পৈতৃক ভিটা কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদী গ্রামে। প্রকৌশলী বাবার চাকরিসূত্রে ভাইবোন দুজনেরই জন্ম শ্রীমঙ্গলের জেমস ফিনলের আমরাইল চা বাগানে। কানাডা আসার পর ২০১১ সালে প্রথম বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিল নাহিয়ান। সেই স্মৃতি আজও অমলিন। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠতেই বলল, ‘দেশে কাটানো সময়টা খুবই মজার ছিল। বাড়িতে ছোটদের সঙ্গে খেলেছি বেশ। রোজ ক্যারম বোর্ড নিয়েই পড়ে থাকতাম। খুব শিগগিরই আমার জন্মস্থানে আবার ঘুরতে যাব।

editor

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries