পেটের দায়ে ২০ কিলোমিটার হেঁটে ভিক্ষারেন ৭৫ বছরের মল্লিকা, জোটেনি বয়স্ক ভাতা
সাজন আহম্মেদ পাপন
মল্লিকা বানু, বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না ঠিকমতো। তবুও পেটের দায়ে প্রতি সপ্তাহে ভিা করতে ঘর থেকে বের হন তিনি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে কিশোরগঞ্জ শহরে আসেন ভিা করতে। দিন শেষে ঘরে ফেরেন হেঁটে হেঁটেই। মল্লিকা বানুর বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের সেহড়া গ্রামে। বসতভিটা বলতে ছোট্ট এক চিলতে জায়গায় তার ভাঙাচোরা একচালা একটি ঘর রয়েছে। শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় দেখা হয় মল্লিকা বানুর সাথে, বয়স তার প্রায় ৭৫। জীর্ণ শরীর। চোখের দৃষ্টিও কমে এসেছে। কানে শুনতে পান কম। জিজ্ঞেস করলাম বাড়িতে কেউ নেই? ভিা করেন কেনো ? উত্তরে কাঁপা কন্ঠে বললেন, “বাবা আমারে দেহার মতো কেউ নাই, স্বামী মইরা গেছে ২০-২২ বছর হইছে। ঘরে দুইডা মেয়ে আছিল, তারারে বিয়া দিয়া দিছি। মেয়ের জামাইরা রিকসা চালায়, হেরারেই সংসার চলে না আমারে কেমনে খাওয়াইবো।” জানা গেছে, স্বামী যখন বেঁচে ছিলেন তখন মল্লিকা বানুর প্যারালাইজড হয়েছিল। তার চিকিৎসার জন্য স্বামী শামসুদ্দীন একটি ঘরের জায়গা রেখে সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর মল্লিকা বানু সুস্থ হন। স্বামী শামসুদ্দীন বেঁচে থাকতে স্থানীয় বাজারে ছোটখাটো চালের ব্যবসা করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভিাবৃত্তিকেই পেশা হিসেবে নিতে হয় অসহায় মল্লিকাকে। বিধবা ভাতা বা কোনো বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি? উত্তরে বললেন, “চেয়ারম্যানের কাছে গেছিলাম কাইজ্জাও করলাম হেরফরেও কার্ড দেয় না। মেম্বররারে কত আত-ফাও ধরছি। কেউ আমারে একটা কার্ড দিলো না।” মল্লিকা বেগম জানালেন, কয়েকদিন ধরে শীত পড়া শুরু হওয়ায় হেঁটে হেঁটে ভিা করতে এখন তাঁর খুব কষ্ট হয়। হাত-পা ঠা-া হয়ে আসে। সামনে আরো শীত বাড়বে সে সময় ভিায় বেরুতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে তাঁকে। কথা বলতে বলতে চোখের পানি ফেলে বললেন, “ভিা না করলে কেমনে বাঁচাম, আমারতো কেউ নাই কেলা আমারে খাওয়াইবো, একটা কার্ড দিলে কিছুডা আসান ফাইতাম।” এ বিষয়ে কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বদর উদ্দিনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার আগে টানা একুশ বছর সেহড়া গ্রামে চেয়ারম্যান ছিলো। সে সময়ে বৃদ্ধ মহিলার কার্ড হয়নি, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি এই বৃদ্ধ মহিলা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি, একমাস পর একটা সুযোগ আসবে তখন আমি উনাকে কার্ড দেয়ার চেষ্টা করবো।”