গুরুদয়াল কলেজে ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ‘মেয়েদের মন’
ভালোবাসা ডটকম, হৃদয় হরণ, মেয়েদের মন-রয়েছে এমন বাহারি নাম, নানা জাত আর স্বাদের দুই শতাধিক পিঠা সাজানো। আর মুখরোচক এসব পিঠা খেতে হাজারো মানুষের ঢল।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে বানানো দুই শতাধিক পিঠা নিয়ে হয়ে গেল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। ২৩টি স্টলে এসব পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। দারুণ এ আয়োজন দেখতে ও পিঠার স্বাদ নিতে ক্যাম্পাসে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এসব পিঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে শীতের মৌসুমে চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে ফুলে সজ্জিত ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আ.ন.ম. মুশতাকুর রহমান।
শিক্ষক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মো. মতিউরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন, গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সম্পাদক মো. আজহারুল ইসলাম। পরে তারা পিঠার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
নানা জাতের পিঠার মধ্যে রয়েছে, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, নারকেল পুলি, দুধ চিতই, দুধ পোয়া, ঝাল পোয়া, মাল পোয়া, সেমাই পিঠা, ডিম পিঠা, মাংস-ঝাল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, রুট পিঠা, থামি পিঠা, অঙ্কন পিঠা, চিরুনি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, দুধ গুগল, বিস্কুট পিঠা, সমুচা পিঠা, ঝিলমিল পিঠা, ডিমের পুডিং, চিকেন চপ, প্রজাপতি পিঠা, চাপটি, টাকি পিঠা, চিতই, ডিম চিতই, দুধের সন্দেশ, ডোবা পিঠা, গোলাপ কাটা পিঠা, পাপড়ি পিঠা, মাংসের পুলি, পায়া পিঠা, শিমফুল পিঠা, অরেঞ্জ জেলি, বেলুনি পিঠা, গোলাপফুল পিঠা, ভ্যানিলা জেলি, মি ডুবা, শল পিঠা, দুধ পুলি, সুখ চিতই, মলই পিঠা, বিস্কুট পিঠা, খাল মশলা পিঠা, টমেটো ঝাল পিঠা, কুড়িমুড়ি পিঠা, নারিকেলের চিড়া, মাংসের মশলা পিঠা, এম পিঠা, এহন সুপি পিঠা, মিষ্টি পিঠা ইত্যাদি।
উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে মেয়েদের মন ২০ টাকা, ভালোবাস ডট কম, হৃদয় হরণ ও ব্যাকআপ। ব্যতিক্রম এ তিনটি পিঠা দেখে সবার নজর গেছে সেদিকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাঙালিয়ানা স্টলে ২০ টাকায় ‘মেয়েদের মন’ নামের পিঠা কিনতে উপচেপড়া ভিড়।
কলেজ শাখা বিএনসিসি প্লাটুন এর স্টলে দেখা গেছে ‘হৃদয় হরণ’ ও ‘ব্র্যাকআপ’ পিঠা।’
স্টল পরিচালক জয়া বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের স্টলে ব্যতিক্রমী একটি পিঠা রেখেছি ‘মেয়েদের মন’, দাম ২০ টাকা। এটা দেখতে অনেকেই আমাদের স্টলে ভিড় করছে।’
কলেজের শিক্ষার্থী শাপলা খাতুন বলেন, ‘এত রকমের পিঠা আমরা নিজ হাতেই বানিয়েছি। এ পিঠাগুলো তৈরিতে বাড়িতে মাসহ অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। অনেক পিঠার নাম আমরা জানতাম না। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা পিঠাগুলো বানানো শিখলাম ও পিঠার নামও শিখতে পেরেছি। এমন আয়োজন আনন্দের। দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম মুস্তাকুর রহমান বলেন, ‘এবার নিয়ে চারবার শীতকালে আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। এবারে ২৩টি স্টলে ২১৩ জাতের পিঠা এসেছে। সবগুলো পিঠা অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে। এবার প্রতিটি স্টলেই নতুন নতুন ধরনের পিঠা তৈরি করে নিয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থীদেরকে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ আয়োজন। এ উৎসবটি শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করছে। উৎসবে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরেরও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সরব উপস্থিত হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পিঠা অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে এ আয়োজন। এ উৎসবটি শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করছে। ক্যাম্পাসের বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সরব উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
পিঠা উৎসবকে ঘিরে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গুরুদয়াল কলেজে এবার ছিল চতুর্থ বারের মতো পিঠা উৎসবের আয়োজন। উৎসবে ২৩টি স্টলে ২১৩ জাতের পিঠা স্থান পায়। উৎসবে অংশ নেয়া স্টলগুলোর মধৈ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনটি স্টলকে পুরস্কার দেয়া হয়।